দেশে ইউএইচটি দুধের বাজার বাড়ছে

দুধ

গরুর দুধ ১৩৫ থেকে ১৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চার সেকেন্ড উত্তপ্ত করে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করার পর ছয় স্তরবিশিষ্ট টেট্রাপ্যাকের বিশেষ কার্টন প্যাকে প্যাকেটজাত করা হয়। এভাবে দুধ সংরক্ষণের পদ্ধতিকে বলা হয় উচ্চ তাপমাত্রা বা আলট্রা হাই টেম্পারেচার (ইউএইচটি) পদ্ধতি। এতে টেট্রাপ্যাকের কার্টন ভেদ করে ভেতরে কোনোভাবে বাতাস, আর্দ্রতা ও সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। ফলে দুধ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। ইউএইচটি দুধের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্যাকেট খুলে সরাসরি পান করা যায়।

প্রায় ৬০ বছর আগে উদ্ভাবিত এই ইউএইচটি পদ্ধতি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে করোনার এই সময়ে যখন মানুষের পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে, বেড়েছে ইউএইচটি দুধের বিক্রিও।

আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। দুগ্ধ খাত-সম্পর্কিত কার্যক্রমে নজর বাড়াতে ২০০১ সাল থেকে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

২০০৩-০৪ সাল থেকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হাত দিয়ে ইউএইচটি দুধ বাংলাদেশের বাজারে আসে। এখনো বাজারের ৭০ শতাংশ হিস্যা গ্রুপটির হাতে। এ ছাড়া ব্র্যাকের আড়ং ডেইরি এবং আকিজ গ্রুপের ফার্ম ফ্রেশ ব্র্যান্ডের ইউএইচটি দুধ পাওয়া যায় বাজারে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, সচেতনতার অভাবে পণ্যটি প্রথমে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল না।

তবে সময়ের সঙ্গে ইউএইচটি পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষের ধারণা বাড়ায় পণ্যটির চাহিদা বেড়েছে। গত বছর ইউএইচটি দুধের বিক্রি বেড়েছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ।

সাধারণভাবে বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে দুধ খাওয়ার প্রবণতা কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা দরকার।

বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের হিসাবমতে, দুধ খাওয়ার পরিমাণ বিশ্ব সংস্থার প্রস্তাবিত মাত্রার এক থেকে দুই–তৃতীয়াংশ কম।

দেশে দুধ কম খাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি দুধের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। এ ছাড়া দুধ ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে খাওয়ার ঝক্কি অনেক। এ ক্ষেত্রে ইউএইচটি দুধ এ ক্ষেত্রে ভালো সমাধান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে ইউএইচটি দুধের চাহিদা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএমএআরসি জানায়, ২০২০ সালে ইউএইচটি মিল্কের বিশ্ববাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৩০ কোটি লিটারে।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির হার খুব উল্লেখযোগ্য কিছু নয়, সেখানে বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ইউএইচটি দুধের চাহিদা।

আগামী বছরগুলোতেও ইউএইচটি দুধের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের জ্যেষ্ঠ পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা খুব দ্রুত বদল হচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের কাজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে পরিবারে পুষ্টির জোগান বাড়ছে। কিন্তু কর্মজীবী নারীদের ব্যস্ত রুটিনে সনাতন পদ্ধতিতে দুধ ফোটানোর সময় থাকে না। এ ক্ষেত্রে তারা ইউএইচটি দুধ বেছে নিচ্ছে।’ গত বছর আড়ং ইউএইচটি দুধের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১৮%।

ইউএইচটি দুধের একমাত্র নেতিবাচক দিক হচ্ছে, এটি পাস্তুরিত দুধের চেয়ে বেশি দামি। এক লিটার পাস্তুরিত দুধ যেখানে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এক লিটার ইউএইচটি দুধের দাম ৯০ টাকা। তারপরেও সংরক্ষণের সুবিধা থাকায় বেশি দামেও পণ্যটি কিনছেন ক্রেতারা।