মার্কিন ডলার–সংকটের কারণেই দেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, ডলার–সংকট মেটাতে সব দিক থেকেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, ডলার–সংকটের কারণেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই (অব কোর্স)। ডলার আমাদের দরকার। যদিও আমাদের অত সংকট নেই। যথেষ্ট ডলার আছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে অবস্থা অনেক স্বাভাবিক।’
১৯ মের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। অথচ ৯ মাস আগেও তা ছিল ৪ হাজার ৮১০ কোটি ডলার। ডলার সাশ্রয় করতে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন ১৩৫টি পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে গত সোমবার নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কয়েক গুণ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তার আগে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে।
কর দিয়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটের আগেই আমরা এটা করার চেষ্টা করছি। চিন্তাভাবনা করছি এ ধরনের একটা উদ্যোগ নেওয়ার। তবে সংসদে বাজেট উত্থাপিত হওয়ার আগপর্যন্ত এ বিষয়ে বলতে চাই না। কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে, তখন আপনারা জানতে পারবেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংক তো কয়েক দিন আগেই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি ডলার পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো তথ্য দিতে হবে না, অর্থাৎ বিনা প্রশ্নেই তা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা একটা করেছে। কোনো প্রশ্ন করা হবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে টাকা বিদেশে চলে গেছে এবং থেকে গেছে। বিভিন্ন উৎস থেকে তা জানতে পেরেছি। অনেক সময় বলা হয়, বিদেশে যাঁরা অর্থ নিয়ে গেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? বিদেশে যে অর্থ চলে গেছে, আমরা বলছি সেগুলো যাতে দেশে ফেরত আসে।’
কত অর্থ চলে গেছে, কোনো ধারণা দিতে পারবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো ধারণা দিতে পারব না।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালেই বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা।
বিষয়টির সঙ্গে যেহেতু কর জড়িত, ফলে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন প্রজ্ঞাপন জারি করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বাজেটে কথা থাকবে। আর এখন যেটা হচ্ছে তা বাজেটের আগেই থাকবে।
যাঁরা অর্থ পাচার করেছেন, তাঁরা কেন দেশে রেকর্ডভুক্ত হতে চাইবেন, অর্থমন্ত্রীর কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে এমনটা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া যখন এমন একটি ঘোষণা দিল, তখন অনেক অর্থ বিদেশ থেকে তাদের দেশে ফেরত এসেছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এখান থেকে যাঁরা অর্থ নিয়ে গেছেন, এ সুযোগটি তাঁদের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি সুযোগ। সেটি তাঁরা কাজে লাগাবেন।’