আবারও রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী সুবিধা দিল সরকার। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীদের চার মাসের বেতন দিতে প্রণোদনা তহবিল থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধে আরও ছয় মাস অব্যাহতি পাবেন তাঁরা। এই তহবিল থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে ঋণ নেওয়া অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানও একই রকম সুবিধা পাবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রণোদনা তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের সময় আগামী ১ মার্চ থেকে আরও ছয় মাস বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই নির্দেশনায় কোনো পরিবর্তন না এলে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ঋণের কিস্তি দিতে হবে রপ্তানিমুখী শিল্পের মালিকদের। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।
করোনার কারণে গত বছরের মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। তখন পোশাকশিল্পের মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুন—এই তিন মাসের মজুরি দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই ঋণের বিপরীতে সেবা মাশুল ছিল ২ শতাংশ। পরে পোশাকশিল্পের মালিকেরা আরও এক মাসের মজুরি দেওয়ার জন্য ঋণ দাবি করেন। সরকারও তা মেনে নেয়। তখন তহবিলের আকার বেড়ে ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা দাঁড়ায়। তবে চতুর্থ মাসের জন্য ঋণের মালিকদের সেবা মাশুল দিতে হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার।
রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য প্যাকেজটি ঘোষিত হলেও তহবিল থেকে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানা মালিক ঋণ নিয়েছেন। এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছিল ছয় মাস। পরবর্তী ১৮ মাসের কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধের শর্ত ছিল। তবে গত বছরের শেষ দিকে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রণোদনা ঋণের গ্রেস পিরিয়ডের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে।
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক ১২ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দিয়ে পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে ১২ মাস করার দাবি জানান। একই সঙ্গে ২৪ মাসের পরিবর্তে ৩৬ মাসে ঋণ রিশোধের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। তারপর নানামুখী চেষ্টা তদবির করে সরকারের উচ্চ মহলকে রাজি করান সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে জানুয়ারি থেকে কিস্তি দিতে হয়েছে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর ফলে পোশাকশিল্পের মালিকেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন। কারণ, এখনো ক্রয়াদেশের পরিমাণ কম। সুতার দাম বেড়ে গেছে। ক্রেতারা বাড়তি দাম দিতে চাইছেন না। বর্তমানে ঋণের কিস্তি দিতে হলে তা হতো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।