ইভ্যালি কীভাবে টাকা ফেরত দেবে, জানতে চাইবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
এবার ইভ্যালির কাছে তাদের ব্যবসায়ের ধরন বা পদ্ধতি (বিজনেস মডেল) জানতে চাইবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গ্রাহক এবং যাদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য এনেছে, সেসব পাওনা ইভ্যালি কীভাবে পরিশোধ করবে, তা–ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হবে। ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস অর্থাৎ আগামীকাল সোমবার এ ব্যাপারে ইভ্যালির কাছে চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে।
আজ রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি ও এ বিষয়ে করণীয়–সম্পর্কিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ কথা জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, জননিরাপত্তা বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) এবং ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘এটা একটা অভ্যন্তরীণ বৈঠক ছিল। গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ইভ্যালির ওপর করা বাংলাদেশ ব্যাংকের গত মাসের প্রতিবেদনের আলোকে এ দফায় ইভ্যালির ব্যবসায়ের পদ্ধতি চিঠি দিয়ে জানতে চাইব আমরা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা ফেরত বা টাকার বিপরীতে তাদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর কী উপায় অবলম্বন করবে ইভ্যালি, তা জানতে চাওয়া হবে চিঠিতে। এ জন্য ইভ্যালিকে ১০ কর্মদিবস সময় দেওয়া হবে।’
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, একটা কেন্দ্রীয় অভিযোগ কেন্দ্র থাকার ব্যাপারে বৈঠক থেকে মত এসেছে। কেউ কেউ বলেছেন, ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন করার জন্য। এখন ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে নীতিমালার আওতায়। ঈদের পরে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা বৈঠক ডাকা হবে, যেখান থেকে ভালো পরামর্শ আসতে পারে।
ইভ্যালি কীভাবে টাকা ফেরত দেবে, জানতে চাইবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মেটা-বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামীকাল সোমবার ইভ্যালির কাছে একটি চিঠি পাঠাবে। জবাব দিতে ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কেউ কেউ ইভ্যালিতে প্রশাসক বসানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ বলেছেন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিতে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বৈঠকে অনলাইনে যুক্ত থেকে মতামত দেন কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজীব উল আলম। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তানজীব উল আলম বলেছেন প্রশাসক বসানো এবং ওয়েবসাইট বন্ধ করার চিন্তা অবান্তর। বরং ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হোক তারা মানুষের টাকা কীভাবে এবং কত দিনের মধ্যে ফেরত দেবে।
বৈঠকে যোগাযোগ করলে বৈঠকে উপস্থিত থাকা ইক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ দফায় ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি জানতে চাইবে। পরে অন্যদেরও (কেস টু কেস) চিঠি দিতে পারে বলে আলোচনা হয়েছে।
একটা কেন্দ্রীয় অভিযোগ কেন্দ্র থাকার ব্যাপারে বৈঠক থেকে মত এসেছে। কেউ কেউ বলেছেন, ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন করার জন্য।
আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠি এলে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই জবাব দেব। বিজনেস মডেল বা ব্যবসায়ের ধরন আমরা ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে ইভ্যালির ওপর এক প্রতিবেদন তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, কোম্পানিটির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। আর প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার সম্পদ।
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি পাঠিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে ইভ্যালির অগ্রিম নেওয়া ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা ইভ্যালি আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইভ্যালিকে এ দফায় চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে পাওনা টাকা পরিশোধের পদ্ধতি ও সময়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।