অবশেষে সেই ডাক ভবনের যাত্রা শুরু হচ্ছে কাল
নির্মাণের পর দুই বছর ধরে পড়ে থাকা বহুতল ডাক ভবনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা অবশেষে শুরু হচ্ছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নান্দনিক এই ভবন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করবেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শেফায়েত হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ডাকবাক্সের আদলে ১৪ তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ভবনটির কাজ ২০১৯ সালে শেষ হয়েছিল। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৯২ কোটি টাকা। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর ধরে ডাক ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটি নিয়ে গত ৪ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তাতে বলা হয়, দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের যত আগ্রহ ছিল, এখন সেখানে যেতে ততটাই অনাগ্রহ তাদের। ফলে দুই বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা ভবনটিতে ধুলোবালুর আস্তরণ পড়েছে। নতুন ভবনে না যেতে বিভিন্ন অজুহাত তুলে এত দিন টালবাহানা করে আসছেন ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবশেষে তাঁদের নতুন ভবনে যেতেই হচ্ছে।
দুই বছর ধরে ডাক ভবন অব্যবহৃত পড়ে থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন ভবনে যেতে আগ্রহী নন। বর্তমানে ডাক বিভাগের সদর দপ্তর অবস্থিত রাজধানীর গুলিস্তানে, যেটি জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস) মোড় হিসেবে অধিক পরিচিত। রাজধানীর জিরো পয়েন্টের কাছে পাঁচ একর জায়গাজুড়ে ডাক বিভাগের সদর দপ্তর ও স্থানীয় ডাকঘর অবস্থিত।
২০১৮ সালের ৩০ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রীর এক নির্দেশনার পর থেকেই ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে জায়গা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশঙ্কা, আগারগাঁও নতুন ভবনে স্থানান্তর হলে গুলিস্তানের এ মূল্যবান জায়গা তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাঁরা এ জায়গা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় নতুন ভবনে যেতে রাজি হচ্ছেন না। নতুন ভবনে না যেতে একসময় আন্দোলনও করেছিলেন ডাক বিভাগের কর্মচারীরা।
২০১৮ সালের ৩০ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রীর এক নির্দেশনার পর থেকেই ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে জায়গা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
একনেকের ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ডাক বিভাগের সদর দপ্তর আগারগাঁও চলে গেলে গুলিস্তানে খালি জায়গাটিকে সবুজময় করা হবে। যাতে পল্টন, মতিঝিলসহ ওই এলাকার মানুষ সেখানে হাঁটতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশের পর থেকেই গুলিস্তানে জায়গা হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয় ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। তাঁরা চেয়েছিলেন, নতুন ভবনে গেলেও গুলিস্তানের জায়গাটিও যেন ডাক বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না।
নবনির্মিত ডাক ভবনটিতে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক পোস্টাল মিউজিয়াম, সুপরিসর অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, মেডিকেল সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক ওয়াই–ফাইসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা রাখা হয়েছে।
দুই বছর ধরে ডাক ভবন অব্যবহৃত পড়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রণালয় থেকে এত দিন বলা হতো, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে সশরীরে আগারগাঁওয়ে নিয়ে ভবনটি উদ্বোধন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আজ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে ভবনটি উদ্বোধন করবেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, নবনির্মিত ডাক ভবনটিতে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক পোস্টাল মিউজিয়াম, সুপরিসর অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, মেডিকেল সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক ওয়াই–ফাইসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা রাখা হয়েছে।
ডাক ভবন উদ্বোধনে ডাক অধিদপ্তরের জন্য ঐতিহাসিক এই ক্ষণ স্মরণীয় রাখতে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।