ডব্লিউটিও সম্মেলন শুরু, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও সহায়তা চায় ঢাকা

সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাণিজ্য সহায়তা অব্যাহত না রাখলে  ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ত্রয়োদশ মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে এক ফটোসেশনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা। গতকাল মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আবুধাবিতেছবি: রয়টার্স

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে যেসব দেশ বেরিয়ে যাবে, তাদের আরও কিছুদিন শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এলডিসি উত্তরণ টেকসই করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা দরকার। গতকাল সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে শুরু হওয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ দাবি করা হয়।

এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাধারণ পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেসব দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটাতে যাচ্ছে, তাদের আরও কিছুদিন বাণিজ্যসহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু তখন বিষয়টি সদস্যদেশগুলোর নিজেদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও ডব্লিউটিওর সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এলডিসি থেকে বের হওয়া দেশগুলোকে আরও কিছুদিন বাণিজ্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গতকাল এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের আট সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম।   

এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্য-সুবিধা ছাড়া আরও যেসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ওষুধশিল্পে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মেধাস্বত্ব আইন বা ট্রিপসের সম্প্রসারণ এবং মৎস্য খাতে ভর্তুকি সুবিধা অব্যাহত রাখা। সম্মেলনের প্রথম দিনে গতকাল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে আরও কয়েক বছর এসব সুবিধা দিতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেসব দেশ এলডিসি উত্তরণ ঘটাতে যাচ্ছে, তাদের কী ধরনের সহযোগিতা দেওয়া যায়, তা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা হবে। তাই এবারের সম্মেলনে এই সব বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সম্মেলন সূত্রে জানা গেছে।

 বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা গতকাল তাঁদের নিজ নিজ দেশের দাবি উত্থাপন করেছেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অবস্থান ও দাবি তুলে ধরেন। 

সরকারি প্রতিনিধিদলের বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরাও অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। আবুধাবি থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব দাবি করা হয়েছে, সেগুলোর যৌক্তিকতা আছে। শুধু আমাদের জন্য নয়, এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটাতে যাওয়া সব দেশের জন্য বাণিজ্য সহায়তা প্যাকেজ প্রয়োজন। তবে আলোচনা হলেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর পক্ষে যায় এমন সিদ্ধান্ত আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মতো এবারও সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষা উচ্চারিত হবে, কিন্তু বাস্তবে কতটা কী পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘মৎস্য খাত নিয়ে আমাদের দাবি আছে, সে বিষয়ে কিছু হতে পারে। তবে উত্তরণের পর কত দিন ভর্তুকি দেওয়া যাবে, প্রস্তাবে সেই ঘরটা খালি আছে। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়টি সদস্যদেশগুলোর সদিচ্ছার ওপরই ছেড়ে দেওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে হয় না। ট্রিপসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো অবস্থান রয়েছে। আমার ধারণা, শুধু টিকার ক্ষেত্রে স্বত্ব ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।’ 

বিনিয়োগ সহজীকরণ

এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগ সহজীকরণ চুক্তিতে সই করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১২০টির বেশি সদস্যদেশ। তবে সে জন্য স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। গতকাল এই বিষয়ক চুক্তি হয়। ‘দ্য ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আইএফডি)’ শীর্ষক এই চুক্তিতে ডব্লিউটিওর ৭৫ শতাংশ দেশ সই করেছে। কিন্তু সংস্থাটির নিয়ম অনুসারে, এই চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থার অন্তর্গত করতে সব সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন হবে।

 ত্রয়োদশ সম্মেলনের আগেই এই চুক্তিপত্র প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই প্রবাহ বৃদ্ধি করা এই চুক্তির লক্ষ্য।

সম্মেলনের উদ্বোধনী সংবাদ সম্মেলনে গতকাল ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকোঞ্জো ইউয়েলা বলেন, ‘বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। তারপরও এই ব্যবস্থার ঘাত-প্রতিঘাত সহ্যের ক্ষমতা আছে; আঘাত পেলেও তা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাণিজ্য আমাদের সংস্থার নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে।’

বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির হার কমলেও পণ্য বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক।

আবুধাবিতে শুরু হওয়া এবারের সম্মেলন ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।