শেষমেশ আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও বাজার থেকে তুলে নিল আদানি গোষ্ঠী। মঙ্গলবার ২৫০ কোটি ডলারের এই এফপিও পুরোপুরি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরও প্রত্যাহার করে নিল তারা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি আদানি গোষ্ঠীর জন্য বড় ধাক্কা। ঘটনাচক্রে ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাব পেশের দিনই এই এফপিও প্রত্যাহার করা হলো।
আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছ, আদানি এন্টারপ্রাইজের ২৫০ কোটি ডলারের এফপিও ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। এর মধ্যে যাঁরা এফপিওতে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথাও জানিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ফলে কেন্দ্রীয় বাজেটের দিনেই ভারতের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন বাজার–বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
এফপিও পুরোপুরি বিক্রি হলেও বুধবার আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ পড়ে যায়। তাতে সব মিলিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন কমেছে ৯০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার কোটি ডলার। বিনিয়োগকারীদের যেন আর ক্ষতি না হয়, সে কারণেই এই এফপিও প্রত্যাহার করে নিয়েছে আদানিরা। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।
এফপিও হলো এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি বাজারে অতিরিক্ত শেয়ার ছেড়ে অর্থ তোলে।
ইন্ডিয়ান এক্সচেঞ্জকে দেওয়া এক বিবৃতিতে গৌতম আদানি বলেন, ‘বাজারে অভূতপূর্ব কিছু একটা ঘটছে, আমাদের স্টকের দাম দিনভর ওঠানামা করেছে। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ মনে করছে, এই এফপিও নিয়ে অগ্রসর হওয়া নৈতিকভাবে ঠিক হবে না।’
বিবৃতিতে আদানি আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যালান্স শিট এখনো ভালো অবস্থানে আছে, ক্যাশ ফ্লো শক্তিশালী, সম্পদও নিরাপদ; আর ঋণ পরিশোধে আমরা কখনো খেলাপ করিনি, আমাদের ইতিহাস একদম নিশ্ছিদ্র। ফলে এই এফপিও বাজার থেকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় প্রভাব পড়বে না।’ বাজার স্থিতিশীল হলে পুঁজিবাজারবিষয়ক কৌশল পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান আদানি।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর গত সপ্তাহে আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছিল, তারা এফপিও ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসবে না। যদিও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছিল, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এফপিওতে শেয়ার বিক্রির সময়সীমা বাড়ানোর বা যে দামে শেয়ার ছাড়ার কথা, তা কমানোর সম্ভাবনা আছে। সেই সঙ্গে ৪১৩ পাতার জবাবে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘ভারত, দেশের প্রতিষ্ঠান ও প্রবৃদ্ধির ওপর আক্রমণ’ বলেও তোপ দাগিয়েছিলেন আদানিরা।
কিন্তু সেই পূর্বাভাস খারিজ করে চলতি সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে আদানি গোষ্ঠীর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা যোগেশিন্দর সিংহ বলেন, আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিওর সময়সীমা বা শেয়ারের দাম বদলের সম্ভাবনা নেই। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, সব নথি না পড়েই হিনডেনবার্গ এ প্রতিবেদনে দিয়েছে।
এত জোরালো অবস্থান নেওয়ার পরও শেষমেশ আদানি গোষ্ঠীর পিছু হটা ‘সমস্যা গভীরতর হওয়ার বার্তা’ বলে মনে করছেন বাজার–বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বিষয়টি হলো, এই এফপিও বাজারে আসার মাত্র দুই দিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে আদানিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, কৃত্রিমভাবে আদানি গোষ্ঠী শেয়ারবাজারে দর বাড়িয়েছে। জালিয়াতি করে ধনী হয়েছে তারা।
হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের জেরে হু হু করে পড়তে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর। এত বড় গোষ্ঠীর শেয়ারের দরপতনের কারণে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন সূচকের বড় পতন হয়। গত ২৫ জানুয়ারি এই প্রতিবেদন প্রকাশের দিন আদানির সম্পদমূল্য ছিল ১১৯ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
আর আজ সকালে তা নেমে এসেছে ৭৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ গত আট দিনে আদানির সম্পদমূল্য কমেছে ৪৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
সম্পদমূল্য হ্রাসের কারণে ধনীদের তালিকায় চতুর্থ স্থান থেকে এখন ১৫ নম্বরে নেমে এসেছেন গৌতম আদানি।