বাজেট ২০২৩–২৪
জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের সঙ্গে নির্মাণ ব্যয় বাড়বে
বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর ওপর কর আরোপের কারণে ফ্ল্যাট-জমি কেনা নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য আরও কঠিন হয়ে যাবে।
ঢাকায় ফ্ল্যাটের দাম আগে থেকেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে সিমেন্ট, ইট, পাথর, বৈদ্যুতিক সুইচ-সকেটসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর ওপর কর আরোপ করায় ফ্ল্যাটের দাম আরেক দফা বাড়বে। এমনকি ফ্ল্যাট ও জমির নিবন্ধনেও আগের চেয়ে বেশি অর্থ লাগবে। এতে ফ্ল্যাট বা জমি কেনা নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য আরও কঠিন হয়ে যাবে।
আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্মাণসামগ্রীর উচ্চ মূল্য ও নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) ভবন নির্মাণে উচ্চতা-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আবাসন খাতের ব্যবসাকে জটিল করে তুলেছে। এর ওপর নতুন কর আরোপ করায় নির্মাণ খরচ বাড়বে। সেই সঙ্গে জমি নিবন্ধনের বিপরীতে ন্যূনতম কর বেঁধে দেওয়ার কারণেও ফ্ল্যাটের দাম আরেক দফা বাড়বে। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা হারাবেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এতে তিনি জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বা করারোপের প্রস্তাব করেছেন। বর্তমানে এই হার ৪ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবে এলাকাভিত্তিক কাঠাপ্রতি ন্যূনতম করও নির্ধারণ করেছেন।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সূত্রে জানা যায়, ফ্ল্যাট নিবন্ধনে গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি দেড় শতাংশ, রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর দেড় শতাংশ এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ২ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ দিতে হবে। তাতে নিবন্ধন ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ।
বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ন্যূনতম কর আরোপসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রীর ওপর শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে ক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আবাসন খাতের পাশাপাশি আড়াই শ উপখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাজেটের আগে নিবন্ধন ব্যয় ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিল রিহ্যাব। কিন্তু বাজেটে উল্টো গেইন ট্যাক্স বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন করে গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর কারণে নিবন্ধন ব্যয় বেড়ে ১৪ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশ হবে।
নির্মাণ ব্যয় বাড়বে
এক বছর আগেও দেশে প্রতি টন রডের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বর্তমানে সেটি বেড়ে লাখ টাকার ঘরে। আবার এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম ৪৩০ টাকা বেড়ে ৫৩০ টাকা হয়েছে। একইভাবে ইট, পাথর, বালু, বৈদ্যুতিক তার, টাইলস, স্যানিটারিওয়্যারসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দামই বেড়েছে। তাতে কমবেশি সব আবাসন প্রতিষ্ঠানই ফ্ল্যাটের দাম ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া তৈরি সাধারণ ইটে প্রতি হাজারে কর ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি লিফটের সরঞ্জামের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
জমিতে ন্যূনতম কর
অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে এলাকাভিত্তিক কাঠাপ্রতি ন্যূনতম করও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড, মহাখালী এলাকায় জমি নিবন্ধন করা হলে চুক্তিমূল্য বা বিক্রয়মূল্যের ৮ শতাংশ কিংবা কাঠাপ্রতি ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি হবে, ওই পরিমাণ কর দিতে হবে। এর মানে, ওই সব এলাকায় প্রতি কাঠায় ২০ লাখ টাকা কর দিতেই হবে।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন প্রথম আলোকে বলেন, বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ন্যূনতম কর আরোপসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রীর ওপর শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে ক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আবাসন খাতের পাশাপাশি আড়াই শ উপখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ন্যূনতম যে কর আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে সরকার বেশি রাজস্ব পাবে না।
কারণ, উচ্চ করের ফলে জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, ডলার-সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আবাসন খাতের ব্যবসা ভালো অবস্থায় নেই। নতুন ড্যাপে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধের পর এখন আবার বাজেটে বাড়তি কর আরোপ করায় আবাসন খাত নতুন করে সংকটে পড়বে।