ডিসি-ইউএনওদের দামি গাড়ি দেওয়া রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ডিসি-ইউএনওদের দামি গাড়ি দেওয়া রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। বর্তমানে আশঙ্কাজনকভাবে ঋণনির্ভরতা বাড়ছে। দেশে রিজার্ভের পরিমাণ যেভাবে কমে যাচ্ছে তা শঙ্কার কারণ হতে পারে।
আজ শনিবার রাজধানীর চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ‘অর্থনৈতিক সুরক্ষায় আগামী বাজেটের কৌশল’ বিষয়ক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী।ৎ
অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি দুবাই-সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শতকোটিপতিদের (বিলিয়নিয়ারদের) তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। তাঁরা কোন দেশের নাগরিক হিসেবে তা করেছেন, সেটাও স্পষ্ট নয়। তারা কীভাবে টাকা আনা-নেওয়া করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছে না।
কর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, বৈষম্য, দুর্নীতি ও অন্যায্যতা বহাল রেখে আসন্ন বাজেটে করারোপ করা হলে তা রাজস্ব আহরণে ভালো ফল দেবে না বলে মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালীদের চাপের কারণে রাজস্ব আহরণ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আর্থিক খাতে সুশাসন নিয়েও কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতে সুশাসনে আমরা অনেকটা এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে কীভাবে পিছিয়ে গেলাম, সেটাই বিস্ময়কর। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) খুব বেশি জানে এটি বিশ্বাস করার কারণ নেই। আইএমএফের পরামর্শ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে গ্রহণ করতে হবে।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ বিত্তবান কর ফাঁকি দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের বড় একটা অংশ ভ্যাট দেয় না। এত কম রাজস্ব আয় দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন চালানোই যাচ্ছে না; সেখানে সরকার উন্নয়ন ব্যয় মেটাবে কীভাবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, মূল্যস্ফীতি, ডলার–সংকট, অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য বৈদেশিক ঋণের চাপ, আর্থিক খাতে অনিয়ম, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ঘোষিত হচ্ছে আসন্ন বাজেট। তবে দেশে বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি।
হাসান আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, আর্থিক খাতে বর্তমানে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। ঋণ জালিয়াতকারী, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অর্থ পাচারের মতো ক্যানসারের চিকিৎসায় উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এখন জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক আরোপিত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করলে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। তাহলে ধীরে ধীরে মানুষ ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আর ব্যাংকে নিরাপদে আমানত রাখার নিশ্চয়তা না থাকলে অর্থ পাচার বাড়বে।