উন্নয়ন সমন্বয়
চ্যালেঞ্জিং হলেও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বাজেটকে ভারসাম্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক বিষয় আছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, এমন আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে সর্বত্র। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হলেও এ ব্যাপারে সরকার যে লক্ষ্য নিয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। একই সঙ্গে তিনি প্রস্তাবিত বাজেটকে ভারসাম্যপূর্ণ ও আশাবাদী হওয়ার মতো বাজেট হিসেবেও অভিহিত করেন।
বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শনিবার আতিউর রহমান বাজেটের প্রশংসাই করেছেন বেশি। নতুন বাজেটে গরিব মানুষের জন্য বাড়তি কিছু না থাকলেও সামাজিক সুরক্ষাসহ নানাভাবে চলমান সুবিধাগুলো যে কমানো হয়নি, সেটাকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।
আতিউর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। তবে সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করা সম্ভব। কারণ, ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের দাম কমতে শুরু করেছে।
দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্যও সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি একেবারে যে সহজ হবে, তা নয়। কারণ, ডলারের বিপরীতে টাকার যে অবমূল্যায়ন হয়েছে, তার কারণেই নিত্যপণ্য আমদানিতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
সরকার সামগ্রিকভাবে আশাবাদী হওয়ার মতো বাজেট দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন আতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট ভারসাম্যপূর্ণ, আশাবাদী হওয়ার মতো এবং সংস্কারমুখী ও ভবিষ্যৎমুখী। যেহেতু আগের বছরের চেয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। এটা আমাদের অর্থনৈতিক শক্তির প্রকাশ। তবে এই বাজেটের সঙ্গে মুদ্রানীতির সুসমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। কর প্রস্তাব দেশীয় শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে।’ এ ছাড়া ৩৮টি পরিষেবা ব্যবহারকারীদের জন্য টিআইএনের বিপরীতে ২ হাজার টাকা করের প্রস্তাবকে অভিনব হিসেবে দেখছেন তিনি।
বাজেটকে ভারসাম্যপূর্ণ বলার কারণ জানতে চাইলে আতিউর রহমান বলেন, বাজেটে আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক কিছু আছে। বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপের বিষয় বলা হয়েছে। এ ছাড়া গরিবের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতা না কমিয়ে কিছুটা হলেও বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে নিরাশাবাদী না হয়ে বরং বাজেট নিয়ে আশাবাদী হওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যেকোনো সংকটে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক খাতে কাটছাঁটের প্রভাব বেশি পড়ে। প্রস্তাবিত বাজেটে এমন কাটছাঁট নজরে না এলেও গতানুগতিকের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। তবে কিছু কিছু খাত বরাদ্দ শেষ করতে পারে না। এমন খাতের বরাদ্দ কমিয়ে যেসব খাতের সক্ষমতা আছে, সেগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।
ভর্তুকিতে কাটছাঁটের চাপ থাকার পরও জনজীবনে স্বস্তি আনতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি জনস্বার্থের প্রতি সংবেদনশীলতার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করা হয়।
করকাঠামো নিয়ে আতিউর রহমান বলেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকে সর্বাত্মক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি কর প্রদানের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। তবে সার্বিক বিচারে কর প্রস্তাবগুলোকে বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীল মনে হয়েছে। করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ করায় মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন অনেক নাগরিক।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের ইমেরিটাস ফেলো খন্দকার শাখাওয়াত আলী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ নাদভী, প্রধান অর্থনীতিবিদ রবার্ট শুভ্র গুদা ও গবেষণা সহযোগী শাহানাজ শারমিন।