এ পর্যন্ত ১,৭০০ অভিযোগ-তদবিরের বার্তা পেয়েছি: সালেহউদ্দিন আহমেদ

সালেহউদ্দিন আহমেদছবি : প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১ হাজার ৭০০টি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পেয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ও তদবিরের জন্যই মূলত এসব বার্তা পাঠানো হয়েছে।  

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘২৪তম আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আজকে (গতকাল) পর্যন্ত আমি হোয়াটসঅ্যাপে ১ হাজার ৭০০টা মেসেজ পেয়েছি। আমি টেলিফোনে ঠিকভাবে কথা বলতে পারি না; চট করে মেসেজ আসে।’

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা ধরনের অনুরোধ আসে উল্লেখ করে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেউ বলে, স্যার, এই লোক চুরি করে, একে দায়িত্ব থেকে সরান; কিংবা ওই লোক ভালো, তাকে দায়িত্বে আনেন। এভাবে নানা বার্তা আসে। এর মধ্যে অনেক প্রকৃত অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকে নিজের স্বার্থের জন্যও বলে। তবে যারা প্রকৃত অভিযোগ তুলে ধরে, সেগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।’

সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থসচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবির সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা একটা দল (টিম) বর্তমানে দায়িত্বে এসেছি। আমরা ক্ষমতা গ্রহণ করিনি, বরং দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। তবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ভেতরে ঢুকে সব জায়গায় ভীতিকর (হরেন্ডাস) অবস্থা দেখছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা কাজ করছি; আমাদের ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন।’  

দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সঠিক নিরীক্ষা প্রয়োজন বলে জানান উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সবচেয়ে বেশি জরুরি। যদিও আমাদের দেশ এসব অভ্যাস তৈরি হয়নি। বরং আমাদের দেশে কাজ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও নিরীক্ষকদের মধ্যে একধরনের সখ্য হয়ে যায়। ম্যানেজমেন্ট যে কাগজপত্র দেয়, তার ওপরে ভিত্তি করেই নিরীক্ষা করা হয়, বিস্তর অনুসন্ধান হয় না।। এটা ভালো অভ্যাস নয়।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেখছি যে কী অবস্থা রয়েছে ব্যাংকগুলোতে। প্রায় সব ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন মানসম্মত নয়। মানের বিবেচনায় এগুলো সব ডিসকোয়ালিফায়েড হওয়া উচিত।’

‘একসময় ধরা পড়বেন’  

উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘টাকাপয়সার হিসাব গুরুত্বপূর্ণ। এই হিসাব ঠিক না রাখলে একসময় না একসময় ধরা পড়বেনই—এটি সোজা কথা। তা দুই বছর হোক, আর চার বছর হোক। যারা অতীতে কোনো কিছুই তোয়াক্কা করত না, তাদের অবস্থা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি তো।’

অনেক ব্যবসায়ী মাত্রা ছাড়িয়ে লাভ করছেন বলে জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা লাভ করবেন। তবে অনেকে এত বেশি লাভ করেন, যা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সম্প্রতি পেঁয়াজ ও আলুর শুল্ক কমিয়েছে সরকার। কিন্তু তারপরও এসব পণ্যের দাম কেন কমছে না, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব নেই; এটা দুঃখজনক।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি ও সুশাসনের চর্চা নিশ্চিতের তাগাদা দিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এত দিন এই চর্চা হয়তো কম ছিল; তবে এখন বাড়াতে হবে। এটি না হলে আমরা সামনে এগোতে পারব না। তাতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ। একেবারে আকাশছোঁয়া বৈষম্য কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।