মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট মওকুফ চায় এর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এ জন্য নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে সংস্থাটি। চেষ্টা চলছে যেন টিকিটের ওপর ভ্যাট বসানো না হয়।
৪ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তের কথা মেট্রোরেল কোম্পানিকে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে মেট্রোরেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিককে চিঠি দেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
মেট্রোরেল চালুর পর আগামী জুন মাস পর্যন্ত ভ্যাট মওকুফ করেছিল এনবিআর। এখন এই ভ্যাট মওকুফ আর অব্যাহত রাখতে চায় না এনবিআর।
তবে ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত জানার পর নড়েচড়ে বসে মেট্রোরেল কোম্পানি। প্রথমেই এনবিআরের সিদ্ধান্তের কথা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে জানায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট না বসানোর বিষয়ে শিগগিরই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
অন্যদিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এনবিআরের সঙ্গেও বৈঠক করতে চায়। চলতি মাসেই এ নিয়ে বৈঠক হতে পারে বলে জানা গেছে। অবশ্য এর আগে একাধিক দফায় বৈঠকে ভ্যাট না বসানোর যৌক্তিকতা বোঝানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোম্পানি সচিব ও পরিচালক আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেল টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর বিধান আছে। কিন্তু মেট্রোরেল একটি গণপরিবহন। ভ্যাট বসানো হলে যাত্রীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে। এ বিষয়টি এনবিআরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি, এনবিআর জনস্বার্থে এই ভ্যাট প্রত্যাহার করবে।’
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট না বসানোর বিষয়ে সরকারের দুটি সংস্থার (এনবিআর ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ) মধ্যে সমঝোতা না হলে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে।
ভ্যাট আইন অনুসারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেল টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর বিধান আছে। কিন্তু সাধারণ ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণি ছাড়াও অন্যান্য শ্রেণিও আছে। যাত্রীদের টিকিটের ‘শ্রেণি’ পছন্দ করার সুযোগ আছে। কিন্তু মেট্রোরেলে পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেখানে সব যাত্রীকে একই টিকিট কিনতে হয়। এ ছাড়া মেট্রোরেল এখন পুরোপুরি গণপরিবহন, যাতে সাধারণ জনগণ ভ্রমণ করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট বিভাগের একজন কর্মকর্তা অবশ্য জানান, এনবিআরের ওপর রাজস্ব আদায়ের বিরাট চাপ আছে। আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এমন শর্ত আছে যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করতে হবে। এসব চিন্তা করে মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট মওকুফের সময়সীমা আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চালুর পর থেকে মেট্রোরেল সেবার ওপর ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। গত বছর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল। বর্তমানে প্রতিদিন কমবেশি আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করে এই নগর পরিবহনব্যবস্থা। চালুর পর এ পর্যন্ত মোট সাড়ে সাত কোটি যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেছেন।
মেট্রো রেলের টিকিট বিক্রি থেকে এখন পর্যন্ত কত আয় হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখের মতো ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাস বিক্রি হয়েছে। অর্ধেকের বেশি যাত্রী এখন এই পাস ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে।