এমআরপি বই সরবরাহে পোল্যান্ডের বদলে ইংল্যান্ডের কোম্পানি, তা–ও দরপত্র ছাড়া
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বই এবং লেমিনেশন ফয়েল আমদানিতে এবার দরপত্র আহ্বান করা হবে না। তার বদলে এগুলো আমদানি করা হবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচআইডি সিআইডি লিমিটেড থেকে এমআরপি বই এবং লেমিনেশন ফয়েল আমদানি করা হবে। আগেও এ প্রতিষ্ঠান থেকে একই জিনিস আমদানি করেছিল সরকার।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ দফায় ১৫ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বই এবং ১৫ লাখ লেমিনেশন ফয়েল আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতাধীন বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে এসব সামগ্রী কিনবে।
বৈঠকে জানানো হয়, বিদেশে বাংলাদেশের ৮০টি মিশন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি মিশনে ই-পাসপোর্ট চালু আছে। বাকি ৩৫টি মিশনে ই–পাসপোর্ট চালু করা হবে পর্যায়ক্রমে। ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়া পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন চাহিদা পূরণে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এমআরপি চালু থাকবে।
বৈঠকে ওঠে আসে, ১৫ লাখ এমআরপি বই এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল আমদানির জন্য আগে উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়। কিন্তু সরকার যে গুণের ও মানের এমআরপি বই ও ফয়েল চায়, নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের দেওয়া স্পেসিফিকেশন তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণে দরপত্র কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দরপত্র প্রক্রিয়ায় আগে ৪০ লাখ এমআরপি বই ও ৪০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আর বছরে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ এমআরপি দেওয়া হয়ে থাকে।
দরপত্র ডেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করেও কেন তা বাতিল করা হলো, এ প্রশ্নের জবাব জানতে বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের পাশাপাশি বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। জানা গেছে, ১৫ লাখ এমআরপি বই ও ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল আমদানির দরপত্রে অংশ নিয়েছিল দুটি প্রতিষ্ঠান। একটি হচ্ছে পিডব্লিউপিডব্লিউ পোল্যান্ড, আর অন্যটি এইচআইডি সিআইডি-ইউকে। এর মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৫৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা দর দাখিলকারী প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউপিডব্লিউ পোল্যান্ডকে নির্বাচিত করে। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের অনুমতি চেয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সুরক্ষা সেবা বিভাগে প্রস্তাবও পাঠায়।
তবে বিপত্তি বাধে মাঝখানে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রস্তাবটি বিবেচনাধীন ছিল সুরক্ষা সেবা বিভাগে। ইউএবি এলটি সিকিউরিটি কনসালট্যান্টস ভিলিনিয়াস, লিথুনিয়ার পক্ষে আইনজীবী হাসানুজ্জামান ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু অভিযোগ জানিয়ে আইনি নোটিশ পাঠান সুরক্ষা সেবা বিভাগ সচিবের কাছে। সচিব কিছু জবাব চান পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর জবাব দেয় ২০২৪ সালের ৮ মে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর জন্য বাছাই তালিকা অনুযায়ী আনুষঙ্গিক কাগজপত্র যাচাই করার সময় নজরে আসে যে দরপত্রটির বৈধতার মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ শেষ হয়ে গেছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর তখন পিডব্লিউপিডব্লিউ পোল্যান্ডের সঙ্গে দরপত্রের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করে। প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র দাখিলের সময় দেওয়া স্পেসিফিকেশন পরিবর্তনের প্রস্তাব করে। কিন্তু পরিবর্তনের প্রস্তাব দরপত্রের কাগজপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৯৯৪টি পাসপোর্ট বুকলেট ও ৯১ হাজার লেমিনেশন ফয়েল মজুত রয়েছে। বুকলেটের মজুত চার মাসের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত হলেও লেমিনেশন ফয়েল দিয়ে মাত্র এক মাসের চাহিদা পূরণ করা যাবে।