অর্থনীতি সমিতির কার্যালয় বেদখল, এক মাস ধরে কার্যক্রমে স্থবিরতা

৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থনীতি সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন অভিযোগে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ব্যানারে একদল সদস্য। পরে তাঁরা একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে ইস্কাটনে সমিতির প্রধান কার্যালয় দখল করে রেখেছেন। এক মাস ধরে কার্যালয়টি তাঁদের দখলেই রয়েছে। এতে সমিতির কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন অ্যাডহক কমিটি গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমিতি দখল করে। এর পর থেকে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা সমিতির কার্যালয়ে যেতে পারছেন না। এমনকি আটজন কর্মকর্তাকেও কার্যালয়ে যেতে নিষেধ করেছে দখলে থাকা পক্ষটি। গত সপ্তাহে একদিন বর্তমান কমিটির সদস্যরা একবার কার্যালয়ে ঢুকলেও পরে আবার তা দখল করে নেয় অ্যাডহক কমিটি।

১৯৭৪ সালে গঠিত অর্থনীতি সমিতির সদস্যসংখ্যা বর্তমানে প্রায় চার হাজার। সারা দেশের অর্থনীতির ছাত্র, শিক্ষক, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা এই সমিতির সদস্য। দুই বছর পরপর সমিতির সদস্যদের ভোটে কমিটি গঠিত হয়। সর্বশেষ গত মে মাসের নির্বাচনে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও মো. আইনুল ইসলামের প্যানেলের ২৮ জনের মধ্যে ২৭ জন জয়ী হয়েছেন। তার বাইরে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন। তবে মো. মুজাফফর আহমেদ ও সৈয়দ মাহবুব-ই-জামিল প্যানেলের কেউ জয়ী হতে পারেননি। নির্বাচনে ৩ হাজার ৮৮৩ ভোটারের মধ্যে ৮৮৭ জন ভোট দেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় অর্থনীতি সমিতির সদস্যদের একটি অংশ বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ব্যানারে বর্তমান কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করেন। তাঁরা সমিতির ভবনে কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ চেয়ে একটি ব্যানারও ঝুলিয়ে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর সমিতির কার্যালয়ে সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আইনুল ইসলামসহ কমিটির কয়েকজন সদস্য আজিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এতে সভাপতি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কমিটির পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকে আজিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পক্ষ। তখন সাধারণ সম্পাদক কমিটির বাকি সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় চান। পরে কমিটির বৈঠকে সদস্যরা গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর কমিটির পদত্যাগ দাবি করা পক্ষটি সমিতির কার্যালয়ে বৈঠক করার ঘোষণা দেয়। তাদের বৈঠক ঠেকাতে কমিটির বর্তমান সদস্যরা সমিতির ফটকে তালা লাগান। ওই দিনই তালা ভেঙে কার্যালয়ের নিচতলায় বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ব্যানারের সদস্যরা। আজিজুর রহমানকে সভাপতি করে গঠিত হয় সমিতির অ্যাডহক কমিটি।

বর্তমান কমিটির একাধিক সদস্য জানান, অ্যাডহক কমিটির পক্ষে বহিরাগত কয়েকজন ব্যক্তি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সমিতির কার্যালয় পাহারা দিচ্ছেন। তাঁরা একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য বলে পরিচয় দেন। তা ছাড়া কর্মকর্তা হিসেবে নতুন একজনকে এনেছে অ্যাডহক কমিটি।

জানতে চাইলে সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মো. আজিজুর রহমান আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত অর্থনীতি সমিতিতে প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক পদে বসে লুটপাটে সহযোগিতা করেছে। অর্থনীতি সমিতির মান ইজ্জত ডুবিয়েছে। এমনকি গত ৩ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বর্তমান কমিটির সদস্যরা গণহত্যাকে সমর্থন করেছে।’

আজিজুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমিতির নেতৃত্বে পরিবর্তন চেয়েছি। একটি নিরপেক্ষ কমিটি করে তার অধীনে নির্বাচন দাবি করেছি। বর্তমান কমিটি পদত্যাগ করার জন্য ৭ দিন সময় নিয়েও তা করেনি। বর্তমানে সমিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা নিয়মিত সভা করছি।’

এদিকে অ্যাডহক কমিটি আগামীকাল শনিবার সমিতির কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের এই ঘোষণার পর বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আইনুল ইসলাম আজ এক বিবৃতিতে বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত সমিতির কার্যালয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন, এমনকি সমিতির ভবনে প্রবেশের সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে মো. আইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাডহক কমিটির নামে কিছু লোক এক মাস ধরে সমিতির কার্যালয় দখল করে আছেন। আমরা পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি অবহিত করেছি। প্রয়োজনে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।’