রাজধানীর ছয়টি কোরবানির পশুর হাটে প্রথমবারের মতো স্থাপিত ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা ব্যবহার করে মোট ৩৩ কোটি ৪০ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৯ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩৯ টাকা। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ এসব তথ্য জানিয়েছে।
নিরাপদ ও সহজ লেনদেন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) যৌথ উদ্যোগে হাটগুলোতে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ বসায়। হাটগুলো হচ্ছে মোহাম্মদপুরের বছিলা, আফতাবনগর, ভাটারা, কাওলা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর ও গাবতলী পশুর হাট। এসব হাটে ৪ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত আট দিন ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে গাবতলী পশুর হাটে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, স্মার্ট হাটে মোট ১৩ হাজার ২১১ বার ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থ লেনদেন হয়েছে। আর লেনদেনের জন্য ৪৪৩টি নতুন ব্যাংক হিসাব খুলেছেন পশু বিক্রেতারা, যার মধ্যে ৩৯৭টিই মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস হিসাব। তবে এমএফএস মাধ্যমে পশু ক্রয়–বিক্রয়ের চেয়ে হাসিলের টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে।
সব কটি হাট মিলিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩৯ টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭৫ টাকা হাসিল হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে। আর ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬৪ টাকা পশু কেনার জন্য এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে।
হাটগুলোতে স্থাপিত এটিএম বুথ ব্যবহার করে মোট ১৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪৫ টাকা লেনদেন করেছেন ক্রেতা–বিক্রেতারা। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন ১৩ কোটি ৩১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৮ টাকা। আর পিওএস মেশিনের মাধ্যমে পশু ক্রয়ে লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার ৬৯১ টাকা।
ছয়টি পশুর হাটের মধ্যে গাবতলী হাটে সবচেয়ে বেশি ১২ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার ৫০১ টাকার ডিজিটাল লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে আফতাবনগরের পশুর হাটে। এই হাটে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৪১ লাখ ২৩ হাজার ১৪৫ টাকা। অন্য হাটগুলোর মধ্যে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ২৮০ টাকা, ভাটারায় ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১০ টাকা, বছিলায় ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৫৪ টাকা ও কাওলায় ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ টাকা ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে।
এবারের কোরবানির ঈদে আট দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ঈদের আগের তিন দিনে, অর্থাৎ ৭ থেকে ৯ জুলাইয়ের মধ্যে। এর মধ্যে ৭ জুলাই ৩২৬টি লেনদেনের মাধ্যমে ৫ কোটি ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ৮ জুলাই ১ হাজার ৬১টি লেনদেনের মাধ্যমে ১২ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার টাকা ও ৯ জুলাই ঈদের আগের দিন মোট ২ হাজার ১৫০টি লেনদেনের মাধ্যমে ১১ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
ক্রেতা–বিক্রেতাদের ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত করতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হাট’ শীর্ষক পাইলট প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ জিয়া উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘লেনদেন সন্তোষজনক। সবচেয়ে ইতিবাচক হলো এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাপারী ও ক্রেতাদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের ধারণা তৈরি হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা এখন দেশের স্থায়ী পশুর হাটগুলোতে স্থায়ীভাবে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছি।’