কাস্টমস ওয়েবসাইটে আজব তথ্য, ‘গজবে এলাহি বেশি রাগী ছিলেন’
পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কালেক্টর পদে দায়িত্বে ছিলেন এস এম এলাহি নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর নামের পাশে বন্ধনী দিয়ে লেখা—‘গজবে এলাহি ভদ্রলোক খুব বেশি রাগী ছিলেন, তাই সবাই এ উপাধি দিয়েছিল।’
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরও কালেক্টর পদটি থেকে যায়। সেখানে আরেকজন কালেক্টর ছিলেন আজিজুর রহমান। তাঁর নামের পাশে লেখা, ‘রোড এক্সিডেন্টে মারা যান’। এমনিভাবে আবদুল লতিফ শিকদারের নামের পাশে লেখা, ‘স্যারের কাস্টম এক্ট বইটি খুবি ভালো।’ লতিফ শিকদারের গ্রামের বাড়ি বরিশাল, তা–ও বলা হয়েছে।
খুবই অবাক হচ্ছেন, এটা কোনো ধরনের পরিচিতি! খোদ সরকারি এক ওয়েবসাইটে এভাবেই সাবেক কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইটের ‘এক নজরে’ অংশে এভাবে ইতিহাসভিত্তিক তথ্য দিতে গিয়ে সাবেক কালেক্টর পদধারীদের নামের পাশে এসব শব্দ ব্যবহার করে অদ্ভুতভাবে পরিচয় করে দেওয়া হয়েছে। সাবেক কর্মকর্তাদের অদ্ভুতভাবে পরিচিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
১৯৯৫ সালের ১ জুলাই থেকে কালেক্টর পদের নাম পরিবর্তন করে কমিশনার করা হয়।
আরও কয়েকজন কালেক্টর সম্পর্কে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইটে এমন শব্দচয়ন করা হয়েছে। যেমন মনযুর মান্নানের পাশে ‘আমার কাস্টমস এর দীক্ষাগুরু শ্রদ্ধেয় স্যার’, শাহ মো. আবুল হোসাইনের পাশে ‘বিএনপি আমলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী’; এস এম আকরামের পাশে ‘নারায়ণগঞ্জ সাবেক আওয়ামী লীগ সাংসদ’; নুরুল ইসলামের পাশে ‘ইনি বাংলাদেশি পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হন, বাড়ী বরিশাল’।
‘এক নজরে’ অংশে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করা কালেক্টরদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার পর আরেকটি বাক্যে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের জানিয়ে রাখি, বরেণ্য শিল্পী রুনা লায়লার বাবা ছিলেন পাকিস্তান কাস্টমের সহকারী কালেক্টর’।
কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো-http://chc.gov.bd/
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবেক সহকর্মীদের সম্পর্কে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার অত্যন্ত গর্হিত ও অরুচিকর বিষয়। সরকারি ওয়েবসাইটে এসব কেন লিখবে? সেখানে সরকারি সংস্থার লোগো থাকে, এটা ভাবমূর্তিরও বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যাঁদের নাম আছে, তাঁদের অনেককেই চিনি। আজিজ ভাই (কালেক্টর আজিজুর রহমান) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে কেন লিখতে হবে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এই ধরনের শব্দচয়ন খুবই অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য।’
সর্বশেষ: আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় ‘এক নজরে’ অংশে থাকা সম্পূর্ণ তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে কেন তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।