গত কয়েক দিন ধরেই ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে যেন এক ধরনের লুকোচুরি খেলছে রাশিয়া। নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে একবার ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয় তো আরেকবার বন্ধ করে, আবার চালু করে। তবে শেষমেশ তারা নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইউরোপকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আরও মূল্য চুকাতে হবে বলেই দেখা যাচ্ছে।
রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপে গ্যাসের মূল৵বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার সকালে বাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরই ইউরোপে গ্যাসের ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর বিবিসির।
শনিবার নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন চালু হওয়ার কথা থাকলেও রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি গাজপ্রম জানায়, লাইনে ফুটো আছে, তাই গ্যাস সরবরাহ চালু করা যাচ্ছে না।
ইউরোপের অভিযোগ, গ্যাস সরবরাহ চালু ও বন্ধ করার মধ্য দিয়ে রাশিয়া ইউরোপের দেশগুলোকে জিম্মি করছে, যদিও মস্কো বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মস্কোর মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের দেশ ও বেশ কিছু কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণেই গ্যাস পাম্প করা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যও আছে। অন্য কোনো কারণে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে সমস্যা হয়নি।’
সম্প্রতি গ্যাসের খুচরা বাজার খুবই উথালপাতাল। গত সপ্তাহে যখন জার্মানি ঘোষণা দিল, তাদের মজুত ভান্ডারগুলো প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত ভরে যাচ্ছে, তখন গ্যাসের দাম কমতে শুরু করে।
তবে যুক্তরাজ্য নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের ওপর নির্ভরশীল না হলেও নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে ইউরোপের খুচরা বাজারে গ্যাসের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। সোমবার যুক্তরাজ্যে গ্যাসের দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
বিকল্প পথে যাচ্ছে গ্যাস
এদিকে নর্ড স্ট্রিম-১ দিয়ে পূর্বপরিকল্পনামতো জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ না করার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই রাশিয়ার গাজপ্রম জানায়, শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ইউক্রেন দিয়ে ইউরোপে ৪২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ঘনমিটার (এমসিএম) প্রাকৃতিক গ্যাস পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সুডজা এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়ে গ্যাসপ্রবাহ ছিল ৪১ দশমিক ৩ এমসিএম।
শনিবার এই পয়েন্ট দিয়ে গ্যাসের প্রবাহ সামান্য বেড়েছে, যদিও তা নর্ড স্ট্রিম বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষতি পোষানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এর আগে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিন দিন ছিল নর্ড স্ট্রিম-১। শনিবার থেকে এ পাইপলাইনে আবার গ্যাস সরবরাহ শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু করতে পারেনি রাশিয়া।
গাজপ্রম বলেছে, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার সময় পাইপলাইনের একটি টারবাইন ফুটো হয়ে তা থেকে তেল চুয়ে পড়ার কারণে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা যায়নি। এ পাইপলাইন কবে নাগাদ সারানো যাবে, তা এখনো জানা যায়নি। যদিও জার্মানি ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সিমেন্স বলছে, এটা কোনো সমস্যা নয়। কারণ, এ ধরনের ফুটো থাকলেও গ্যাস সরবরাহে বিশেষ সমস্যা হয় না। এটা দৈনন্দিন রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়।’
ইউরোর দরপতন
এদিকে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ঘোষণায় ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর দরপতন হয়েছে। এক ইউরোর মান এখন শূন্য দশমিক ৯৯ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ২০০২ সালের পর এটিই ইউরোর সবচেয়ে নিম্ন দর। সামগ্রিকভাবে ডলার সূচকের মানও ঊর্ধ্বমুখী। ব্রিটিশ মুদ্রার পাউন্ডের দরপতন হচ্ছে।
এদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে রাশিয়া যেন যুদ্ধ চালানোর জন্য বেশি অর্থ জোগাড় করতে না পারে, সে জন্য বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি–৭ রাশিয়ার গ্যাসের দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।