আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার ছাড়ের অনুমোদন
বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের পর্ষদ। এ অনুমোদনের ফলে বাংলাদেশ তৃতীয় কিস্তিতে পাবে ১১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে আগামী দুই দিনের মধ্যে কিস্তির এ অর্থ বাংলাদেশ হাতে পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তৃতীয় কিস্তির অর্থ হাতে পেলে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে পাবে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। বাংলাদেশের ঋণ আবেদনের ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। আইএমএফ জানায়, শর্তপূরণ সাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের এ অর্থ দেওয়া হবে।
আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়ার চিঠিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এখন সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম)। তাই জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট-সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থের দরকার।
বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)—এই তিন আলাদা ভাগে মিলবে আইএমএফের ঋণ। তবে সংস্থাটি ঋণপ্রস্তাব অনুমোদনের পাশাপাশি ৩৮টি শর্তও দিয়েছে।
ঋণ পাওয়ার শর্তগুলোর মধ্যে ছিল ব্যাংকঋণের সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া অর্থাৎ একটিই দাম রাখা, নির্দিষ্ট মাত্রায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সব সময় সমন্বয় করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ সংগ্রহ কমিয়ে আনা ইত্যাদি।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে ব্যাংকঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করা। ডলারে বেঁধে দেওয়া দাম তুলে নিয়ে ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা চালু, সময়ে সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় ইত্যাদি।
এদিকে প্রতি কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে ঋণের শর্তপূরণের অগ্রগতি যাচাইয়ে আইএমএফের একটি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। দলটির সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে বিভিন্ন শর্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য নেন। এরপর ওই প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একেকটি কিস্তি ছাড় করে আইএমএফ।