আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি, ডিএমডি আসছেন ঢাকায়
সাড়ে তিন বছরের জন্য ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তির আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ আগামী মাসে ঢাকা আসছেন। আগামী ১২ থেকে ১৩ জানুয়ারি তাঁর আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমএফ সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহের সাক্ষাতের অনুমতিও চেয়েছে আইএমএফ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খানের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়।
কবে আসছেন আইএমএফের ডিএমডি, এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির মুখপাত্র হুং ল্যান ভু গতকাল মঙ্গলবার এক ই–মেইল বার্তায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে অ্যান্তইনেত সায়েহর ঢাকা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। আর আইএমএফের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হবে ঋণের চুক্তি।’
আইএমএফের কাছে গত জুলাইয়ে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চায় বাংলাদেশ। আইএমএফও বাংলাদেশকে তা শর্ত সাপেক্ষে দিতে রাজি। গত অক্টোবরে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার ফাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বাধীন দল আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে গভর্নর তখন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আইএমএফ থেকে ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
ঋণ দেওয়ার অংশ হিসেবেই গত ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় দুই সপ্তাহের বৈঠক করে গেছে আইএমএফের একটি দল। দলটির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ সরকারের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের বৈঠক হয়েছে।
বৈঠক শেষ করার দিন গত ৯ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়ার কারণ তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের তিনি ওই দিন জানিয়েছিলেন, সারা বিশ্বের অর্থনীতিই ক্রান্তিকাল পার করছে। ডলারের বিপরীতে প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ উত্তাপের আঁচ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে। এ উত্তাপ যাতে কোনো ধরনের সংকটকে ঘনীভূত না করে, তা নিশ্চিত করতে আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়া হয়।
আইএমএফকে পাঠানো চিঠিতে অবশ্য বলা হয়েছিল, এখন সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট-সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থের দরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকগুলোতে অংশ নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট খাতের তথ্য চেয়েছে আইএমএফ। সরকারি দপ্তরগুলোও তথ্য দিয়েছে। আইএমএফের দল তথ্য জানতে চেয়েছে, আর বাংলাদেশের দল জবাব দিয়েছে, এভাবেই হয়েছে সব বৈঠক। জানা গেছে, আগামী ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি বসবে আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক। আইএমএফের ডিএমডি অ্যান্তইনেত সায়েহ বাংলাদেশ সফর করে চলে যাওয়ার পরই ঋণ প্রস্তাব উঠবে পর্ষদে। পর্ষদে প্রস্তাবটি তাঁরই উত্থাপন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পর্ষদে ঋণ প্রস্তাব তোলার আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের যৌথ স্বাক্ষরে চুক্তির একটি খসড়া যাবে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে।
পর্ষদ অনুমোদন দেওয়ার পরই ঋণের শর্তগুলো প্রকাশ করবে আইএমএফ। আর পর্ষদের অনুমোদনের বড়জোর ১০ দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ডলার। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাত কিস্তির এ ঋণের সর্বশেষ কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। ঋণের গড় সুদহার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিশন যেহেতু শেষ, ফলে এখন চুক্তি, পর্ষদের অনুমোদন ও ঋণের কিস্তি বিতরণ আনুষ্ঠানিকতা ও সময়ের ব্যাপার মাত্র। ডিএমডি পর্যায়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ পর্যায়ে কেন আসছেন বোঝা মুশকিল। ঋণ কর্মসূচি হতে যাচ্ছে বলে তিনি অভিনন্দন জানাতেও আসতে পারেন। আবার এমনও হতে পারে যে কিছু বিষয়ে তিনি পরিষ্কার ধারণা পেতে চান।’
যেসব শর্তে চুক্তি সই হবে, সেগুলো মানা কি বাধ্যতামূলক, এমন প্রশ্নের জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শর্ত যদি থেকে থাকে, অবশ্যই মানা বাধ্যতামূলক। কারণ, শর্ত পূরণ না হলে কিস্তি আটকে দেয় আইএমএফ।’