জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এডিবির মাইলফলক ঋণ কর্মসূচির ঘোষণা
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) নতুন ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে। এ কর্মসূচির নাম এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুবিষয়ক উদ্ভাবনী অর্থায়নসুবিধা (ইনোভেটিভ ফাইন্যান্স ফ্যাসিলিটি ফর ক্লাইমেট ইন এশিয়া অ্যান্ড দা প্যাসিফিক বা আইএফ-সিএপি)।
এডিবির ৫৬তম বার্ষিক সম্মেলনের শুরুতেই এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া নতুন এ ঋণ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি এ কর্মসূচিকে এডিবির জন্য মাইলফলক পদক্ষেপ উল্লেখ করে বলেন, এটি এ অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলার যুদ্ধকে আরও শক্তিশালী করবে।
এডিবির এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চনের কনেভনসিয়া নামের বিশাল এক সম্মেলনকেন্দ্রে। কোভিড মহামারির পরে এটাই প্রথম এডিবির উন্মুক্ত সম্মেলন। এটি উদ্বোধনের আগে সংবাদ সম্মেলন করেন এডিবির প্রেসিডেন্ট।
এডিবি প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, ‘আমাদের জীবদ্দশায় জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম বড় সংকট এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো এ যুদ্ধে একদম সম্মুখসারিতে আছে। গত ১২ মাসে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যেসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে, এর গভীরতা যেমন বেশি, তেমনি তা ঘটছেও ঘন ঘন। আমাদের অবশ্যই সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা মনে করি, নতুন এ কর্মসূচি জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থেই প্রভাব ফেলতে পারবে। আর এভাবেই এ অঞ্চলের জন্য এডিবি কাজ করে যাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে মাসাতসুগু আসাকাওয়া জানান, আইএফ-সিএপি নামের নতুন এ ঋণ কর্মসূচির প্রাথমিক সহযোগী হচ্ছে ডেনমার্ক, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। এ কর্মসূচিতে অংশীদার দেশগুলো কী পরিমাণ অর্থ অনুদান দেবে এবং এডিবির সার্বভৌম ঋণ পত্রকোষে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ গ্যারান্টির ফলে ঋণের ঝুঁকি কমবে। ফলে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এডিবি আরও মূলধন জোগাতে পারবে, যার কারণে নতুন কর্মসূচি ত্বরান্বিত হবে। এ ক্ষেত্রে ১ ডলার ঢুকলে ৫ ডলার ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। এ মডেল অনুযায়ী প্রাথমিক পরিকল্পনা হচ্ছে, ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার গ্যারান্টি জোগাড় করা, যা ১৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ তৈরি করবে। এ ধরনের গ্যারান্টির প্রক্রিয়া এর আগে কোনো বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থা গ্রহণ করেনি, যা এডিবি শুরু করল।
এডিবি প্রেসিডেন্ট আরও জানান, এডিবির উদ্দেশ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ২০১৯-৩০ সময়ে নিজস্ব সম্পদ থেকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল তৈরি করা। নতুন আইএফ-সিএপি কর্মসূচি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সব মিলিয়ে এডিবি এখন সম্ভাব্য অংশীদারদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে আছে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস, বেসরকারি খাত, দাতা ও দ্য গ্লোবাল এনার্জি অ্যালায়েন্স ফর পিপল অ্যান্ড প্ল্যানেটের মতো প্রতিষ্ঠান।
সংবাদ সম্মেলনে এডিবি প্রেসিডেন্ট জানান, ২০০০ সালের পর কেবল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই ৪০ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় ঘটে গেছে। এতে ৩৫০ কোটির বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মারা গেছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। ২০৫০ সালের মধ্যে শহরাঞ্চলের আরও ১০০ কোটি মানুষ ক্ষতিকর বায়ুদূষণ ও তাপজনিত চাপের মধ্যে বসবাস করবে।
সবশেষে মাসাতসুগু আসাকাওয়া জানান, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সংকট মোকাবিলায় দক্ষ ও টেকসই করার ক্ষেত্রে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।