ডলার–সংকট মোকাবিলায় সৌদি আরবের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ
দেশের চলমান ডলার–সংকট মোকাবিলায় সৌদি আরবের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি সৌদি আরব সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ সহায়তা চেয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। সৌদি সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলেও জানান তিনি।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা সৌদি আরব থেকে আমদানি করা জ্বালানির মূল্য পরিশোধে ৪৫ দিন সময় পাই। কিন্তু ডলার–সংকটের কারণে আমরা তাদের বলেছি, আমাদের যদি এক বছর সময় দেওয়া হয়, তাহলে ভালো হয়। তারা বলেছে, তারা সেটি বিবেচনা করবে।’
তিন দিনের সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন। ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশনে (আইএমসিটিসি) বাংলাদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন সালমান এফ রহমান।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলার–সংকট চলছে। একদিকে প্রবাসী আয় কমে গেছে এবং প্রত্যাশা মতো রপ্তানিও হচ্ছে না। অন্যদিকে, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে বিশাল ধস নেমেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রভাব বাড়াতে ডলারের দাম অল্প সময়ে মধ্যেই ৮৬ থেকে বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। তবে ডলার–সংকট এখনো চলমান।
সালমান এফ রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, পটুয়াখালীর পায়রায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবকে অর্থনৈতিক অঞ্চল দিতে চাই। তাদের বিনিয়োগমন্ত্রী পায়রাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে দুই দেশের যৌথ মালিকানায় ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ। দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সারের নিরবচ্ছিন্ন চাহিদা পূরণে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘সৌদি আরবে যৌথ উদ্যোগে আমরা ইউরিয়া সার কারখানা করব। উৎপাদিত ইউরিয়ার শতভাগ আমরাই আমদানি করে নিয়ে আসব। তারা প্রস্তাবটি নিয়ে অগ্রসর হতে চায়। মার্চের মধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হবে। শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, এখানে বেসরকারি খাতেরও যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সমন্বিত করণীয় বিষয়ে ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশনের (আইএমসিটিসি) সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় অংশগ্রহণ ছাড়াও সৌদি আরবে বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে সে দেশের জ্বালানিমন্ত্রী, বিনিয়োগমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন সালমান এফ রহমান।
আইএমসিটিসি ‘সভায় কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি’ উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ইসলামের নামে যে সন্ত্রাসবাদ হয়, তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। সন্ত্রাস, সন্ত্রাসই। সন্ত্রাসীদের ধর্ম নেই। ইসলামের বদনাম করার জন্য তারা এসব করে। এই সংস্থার মাধ্যমে ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে যে সহযোগিতা আছে, সেটি আরও বেগবান করার বিষয়ে সবাই একমত। ফিলিস্তিন ও গাজায় যা হচ্ছে, সেখানে জোরালোভাবে সবাই তার নিন্দা জানিয়েছে এবং সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা কাজ করবে।’
শেভরন বিবিয়ানাতে নতুন বিনিয়োগ করতে চাইছে জানিয়ে সালমান রহমান বলেন, ‘তারা ভাবছে, সেখানে গ্যাস আছে, কিন্তু ড্রিলিং না করা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তারা সেখানে নতুন বিনিয়োগ করতে চায়। গভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানেও তারা আগ্রহী। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতিতে জ্বালানি খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আরও বলেন, খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে সৌদি আরব বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। মূলত তারা বাংলাদেশে সবজি, মাছ বা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করবে, এরপর নিজ দেশে নিয়ে যাবে। তারা সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখবে, বাংলাদেশে কোন ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে গবেষণার মাধ্যমে লং গ্রেইন রাইস বা বড় আকারের চাল উৎপাদনের সম্ভাবনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।