মে মাসের তুলনায় জুনে অর্থনীতির গতি কমেছে

দেশের অর্থনীতির গতি চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুনে বেশ কমে গেছে। এ সময়ে উৎপাদন, নির্মাণ, সেবা ও কৃষি ব্যবসা খাতের গতি কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদিও মে মাসে এই চার খাতের গতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী।

দেশে অর্থনীতির গতিশীলতা নির্ণয়ে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) বা সূচকের মাধ্যমে এ চিত্র উঠে এসেছে। মূলত কৃষি ব্যবসা, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা খাতের ভিত্তিতে পিএমআই করা হয়েছে। গত মে মাসে প্রথমবারের মতো এই সূচক প্রকাশ করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। এরপর প্রতি মাসেই ধারাবাহিকভাবে তা প্রকাশ করা হচ্ছে। রোববার জুন মাসের পিএমআই প্রকাশ করা হয়।

কোন খাতে পিএমআই সূচকের কত মান
গ্রাফিক্স: প্রথম আলো

দেশের পিএমআই মান মে মাসের তুলনায় জুনে ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। মে মাসে এই সূচকের মান ছিল ৭০ দশমিক ১। এপ্রিলে পিএমআইয়ের মান ছিল ৬২ দশমিক ২। গত ডিসেম্বরে পিএমআই ছিল ৫৫। তবে জাতীয় নির্বাচনের পর অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়তে থাকে। টানা দুই মাস বৃদ্ধির পর মার্চ থেকে এই সূচক কমতে শুরু করে। এপ্রিলেও কিছুটা কমে। তারপর মে মাসে অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়লেও জুনে তা আবার কমেছে।

কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন ও সেবা খাতের ৪০০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে পিএমআই সূচক প্রকাশ করা হয়। সূচক তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঁচামাল ক্রয়, পণ্যের ক্রয়াদেশ, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়। সূচকটি প্রণয়নে সহযোগিতা করছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কার্যালয় (এফসিডিও) ও সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড মেটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট (এসআইপিএমএম)।

পিএমআই সূচকটি শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হয়। স্কোর বা মান ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং স্কোর ৫০-এর নিচে হলে সংকোচন বোঝাবে। আর স্কোর ৫০ থাকলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট খাতে ওই মাসে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

চলতি বছরের জুনে উৎপাদন খাতের সূচক সবচেয়ে বেশি কমেছে। গত মে মাসে এই খাতের সূচক ছিল ৭৬ দশমিক ৩ হয়েছে। গত জুনে তা ১৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট কমে ৬১ দশমিক ৭ হয়। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন খাতের সূচক বৃদ্ধির পর গত মাসে কমেছে। অন্যদিকে চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুনে কৃষি ব্যবসায় সূচক ৭৯ দশমিক ৩ থেকে কমে ৭০ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। যদিও গত মার্চ থেকে টানা তিন মাস কৃষি ব্যবসার সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

এদিকে মে মাসের তুলনায় জুনে নির্মাণ খাতের সূচক ৭৪ দশমিক ৩ থেকে কমে ৬৫ দশমিক ১ হয়েছে। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে এই খাতের সূচক কমে যাওয়ার পর মে মাসে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন এই খাতের সূচকের মান ৬৩ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে ৭৪ দশমিক ৩ হয়েছিল।

উল্লিখিত তিন খাতের চেয়ে সেবা খাতের সূচক সবচেয়ে কম কমেছে। জুনে সেবা খাতের সূচকের মান ৬৩ দশমিক ৫ হয়েছে, যা এর আগের মাসেও ছিল ৬৩ দশমিক ৫। তার আগে এই খাতের সূচক মার্চ মাসে বাড়লেও এপ্রিলে কমে যায়। এরপর মে মাসে বৃদ্ধি পায়।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম মাশরুর রিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, গত জুনে চার খাতের সূচক নিম্নমুখী হলেও অর্থনীতি এখনো সম্প্রসারণমূলক অবস্থায় রয়েছে। যদিও গতিটা কমেছে। তিনি আরও বলেন, উৎপাদন খাতে সূচক সবচেয়ে বেশি কমেছে। এর কারণ জাহাজভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি পবিত্র ঈদুল আজহায় শিল্পকারখানা দীর্ঘ ছুটিতে ছিল। গত মাসে সিলেটসহ কয়েকটি জায়গায় বন্যার কারণে কৃষিপণ্যের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এতে কৃষি ব্যবসার সূচক কমেছে। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে শ্রমিকেরা বাড়ি যাওয়ায় নির্মাণ খাতের সূচকেও নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল।