অবসর নিয়ে নিজের পরিকল্পনা জানালেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান

অধ্যাপক রেহমান সোবহানফাইল ছবি প্রথম আলো

অবসর গ্রহণের বিষয়ে নিজের পরিকল্পনা জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। এখন তাঁর বয়স ৯০। তিন খণ্ডে যে আত্মজীবনী লিখছেন তিনি, তার শেষ খণ্ডটি লেখা হয়ে গেলেই ছুটি নিতে চান। এরপর শুধুই অবসর জীবন কাটাবেন তিনি।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনে রেহমান সোবহান আজ শনিবার ঢাকার এক হোটেলে একক বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি কথা বলেন রাজনীতি নিয়ে, উঠে আসে দেশের বিদ্যমান বৈষম্য আর অন্যায্যতার কথাও। তবে প্রশংসা করেন দারিদ্র্য কমানোর উদ্যোগকে।

এরই এক ফাঁকে জানান অবসর নিতে আর খুব বেশি দেরি করবেন না বর্তমানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ‘এখন আমার বয়স ৯০ বছর। আমি তৃতীয় আত্মজীবনী লিখছি। এটা লেখা হলে কলম ছুড়ে ফেলব। তখন টিভিতে সিরিয়াল দেখব।’

এর আগে আত্মজীবনীর দুই খণ্ড লিখেছেন তিনি। আত্মজীবনীর নাম আনট্রাঙ্কুয়েল রিকালেকশনস। এই শিরোনামের পর খণ্ড দুটির নামকরণ হয়েছে এভাবে—দ্য ইয়ার্স অব ফুলফিলমেন্ট এবং ফ্রম ডন টু ডার্কনেস। খণ্ড দুটির মাধ্যমে রেহমান সোবহান তাঁর জীবনকে দুটি পর্বে মলাটবদ্ধ করেছেন।

প্রথম খণ্ডের ব্যাপ্তিকাল রেহমান সোবহানের জন্ম থেকে ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, যেদিন তিনি মূলত স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাতে প্রথম পা রাখেন। আর পরের খণ্ডটি শুরু হয়েছে ১৯৭২ সালের প্রথম দিন থেকে এবং ১৯৭৫ সালের শেষ পর্যন্ত। ভারতীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সেজ পাবলিকেশনস থেকে আগে এ দুটো প্রকাশিত হয়েছিল। পরে ইউপিএল নতুন করে এগুলো প্রকাশ করে।

রেহমান সোবহানের জন্ম ১৯৩৫ সালে। ঢাকার নবাব পরিবারে ছিল তাঁর নানাবাড়ি। পাকিস্তানের একসময়ের গভর্নর জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ছিলেন তাঁর নানা। উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বাবার চাকরির সুবাদে তাঁর শৈশব কেটেছে কলকাতায়। পড়াশোনার জন্য কেটেছে দার্জিলিং, লাহোর, কেমব্রিজে।

কেমব্রিজে পড়ার সময় রেহমান সোবহান সিদ্ধান্ত নেন তিনি ঢাকাতেই থিতু হবেন। এ বছরের মার্চে তাঁর বই প্রকাশের আলোচনায় তিনি বলেন, এটি ছিল একই সঙ্গে তাঁর পলিটিক্যাল ও আইডিওলজিক্যাল সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা পরিস্থিতির মধ্যেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন।

লন্ডন থেকে পড়াশোনা শেষ করে ফিরে আসার পর তাঁর বাবা ঢাকায় তাঁদের পারিবারিক চামড়ার ব্যবসায় ঢুকিয়ে দিতে চাইলেন। রেহমান সোবহানের ভাষায়, এটি ছিল তাঁর বাবার পিকিউলিয়ার আইডিয়া বা অদ্ভুত চিন্তা। চামড়ার ব্যবসায় যুক্ত হওয়া নিয়ে পিতা-পুত্রের মধ্যে দ্বৈরথের বিষয়টিও উঠে আসে মার্চ মাসে দেওয়া তাঁর ওই বক্তব্যে।

এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতায় যুক্ত হয়ে যান। সে সময় প্রত্যক্ষ করেন পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, সাধারণ মানুষের মধ্যে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও সেই সময়ের ছাত্র-জনতার রাজনীতি। ছয় দফার খসড়া তৈরি ও নির্বাচনের ইশতেহার তৈরিতে যুক্ত ছিলেন তিনি।