সবকিছু ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

দেশে এমনিতেই মূল্যস্ফীতির হার বেশি, তার মধ্যে আবার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। এটা মোটেও যৌক্তিক হয়নি।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে একদিকে যেমন বিদ্যুতের বিল বাড়বে, অন্যদিকে বাজারে পণ্যের দাম আরও বাড়বে। যেমন কৃষিকাজে সেচের ব্যয় বাড়বে। কৃষিপণ্যের দাম বাড়বে। এর সঙ্গে দোকানের বিদ্যুৎ ব্যয় বাড়বে। কারখানায় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। সাধারণত দেখা যায়, ব্যয় বৃদ্ধির বড় একটি অংশ ভোক্তাদের ওপর চাপানো হয়।

বিদ্যুৎ খাতে সরকার বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয়। মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সরকারের ভর্তুকি ব্যয় হয়তো কিছুটা কমবে, কিন্তু বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না।

সম্ভবত, আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে তারা যে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের কথা বলেছিল, তার অংশ হিসেবে এটা করা হয়েছে। আমি মনে করি, মূল্য বৃদ্ধি না করে অন্যভাবে তা করা যেত।

এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। দেশে সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বড়ালেও বিদ্যুৎ খাতের দক্ষতা বাড়েনি। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, অদক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ডিজেলভিত্তিক উৎপাদন কেন্দ্র, অদক্ষ সঞ্চালন লাইন—এসব সমস্যার সমাধান না করে ভোক্তার ওপর দায় চাপানো হলো। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। ভর্তুকির বড় অংশই কিন্তু এ কারণে দিতে হয়।

যেসব কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, সেগুলো আমলে নেওয়া জরুরি। কীভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে এসে কম মূল্যের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, সেই চিন্তা করা উচিত। এই পরিস্থিতিতে সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা উচিত।

সরকার ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ও সেচে সৌরশক্তি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ, সরকার সেটাই করছে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গবেষণা পরিচালক, সিপিডি