বরাবরের মতো চলতি বাজেটেও স্বাস্থ্য খাতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছে। সেই কথা নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করছেন, প্রস্তাবিত বাজেট স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা সমাধানে কাজে আসবে না।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এটি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল জাতীয় বাজেটের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এবার বরাদ্দ মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
এই বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। বাজেট যখন সংশোধিত হয়, তখন দেখা যায় স্বাস্থ্যের বরাদ্দের এই হার আরও কমে যায়। গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল জাতীয় বাজেটের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে তা কমে হয় ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে রাখার কথা বলে আসছে বহু বছর ধরে। এ দেশের জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, ১৫ শতাংশ না হোক, জাতীয় বাজেটের ৮ থেকে ১০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হোক। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কম রাখার এই প্রবণতা দীর্ঘদিনের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা প্রায় ১০ বছর আমরা স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ৫ বা ৫ শতাংশের কম দেখতে পাচ্ছি। এটা নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথমত কম বরাদ্দে মানুষ মানসম্পন্ন সেবা পাবে না। এতে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির পকেটের খরচ বাড়বে। মানুষ সেবা নেওয়া থেকে দূরে থাকবে। অথবা সেবা নিতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র বা নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ১১ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। দুই বিভাগ মিলে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ৩ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা বেশি।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের কয়েকটি সূচক এখন নিম্নমুখী। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, দেশে শিশুমৃত্যু বাড়ছে। অনেক বছর ধরে মোট প্রজনন হার এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। পাশাপাশি চিকিৎসা করাতে গিয়ে ব্যক্তির পকেটের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ হয়েছে। এই হার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যে কম বরাদ্দ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরাদ্দের বড় অংশ চলে যাবে বেতন ভাতায়, আর একটি অংশ মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারবে না। এখন অসংক্রামক ও সংক্রামক দুই ধরনের রোগই দেশে বেশি। তবে এসব প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বাজেটে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের কোনো ইঙ্গিত প্রস্তাবিত বাজেটে আছে বলে আমি মনে করি না।’