আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা
ব্যবসায়ীরা অব্যবস্থাপনা ও বাড়তি বাসাভাড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ
মেলায় খাবারের দাম বেশি, টয়লেট নোংরা, পানি ও ধুলাবালুর সমস্যা নিয়ে বিক্রেতাদের যেন অভিযোগের শেষ নেই।
ভারতের দিল্লি থেকে বেডশিট, তথা বিছানার চাদর, ব্যাগ, কুশনের কভার ইত্যাদি পণ্য নিয়ে এ বছর মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এসেছেন ব্যবসায়ী মনোজ কুমার। থাকার সুবিধার জন্য রাজধানীর পূর্বাচলে মেলার কাছাকাছি স্থানে তিন কক্ষের একটি বাসা এক মাসের জন্য ভাড়া নেন তিনি। তবে এর জন্য তাঁকে গুনতে হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এই পরিমাণ বাসাভাড়া নির্ধারণকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করছেন মনোজ।
বাসাভাড়া নিয়ে অভিযোগ শুধু মনোজ কুমারের একার নয়, গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মেলায় অন্তত ৩০ জন ব্যবসায়ী প্রথম আলোর কাছে এমন অভিযোগ করেন। তাঁদের অভিযোগ, বাণিজ্য মেলার আশপাশে সব বাসার ভাড়াই কয়েক গুণ বেশি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মেলা এলাকায় খাবারের উচ্চ মূল্য, নোংরা টয়লেট, পানি ও ধুলাবালুর সমস্যা ব্যাপক।
এই এলাকায় ভাড়া দেওয়ার মতো বাসা অনেক কম। এই সুযোগে অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে থাকেন।সালাউদ্দিন ভূঁইয়া, চেয়ারম্যান, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন
১ জানুয়ারি ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে দেশি-বিদেশি ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীদের বড় অংশই ওই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে।
ব্যবসায়ী মনোজ কুমার যে বাসায় ভাড়া নিয়েছেন, সেটি একটি চারতলা ভবন। এতে থাকা ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে ৫৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রেও মোটামুটি একই চিত্র পাওয়া গেছে।
বাণিজ্য মেলার পূর্ব দিকে চার রুমের একটি বাসার ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে ডব্লিউএ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী মো. ফাহিম জানান, মূল ঢাকা থেকে অনেক দূরে হওয়ায় বিক্রেতারা বাধ্য হয়ে এই এলাকায় এক-দেড় মাসের জন্য বাসাভাড়া নেন।
এই সুযোগে স্থানীয় ব্যক্তিরা যাঁর কাছ থেকে যেমন সম্ভব, ভাড়া আদায় করে নিয়েছেন। ফাহিম বলেন, এটা রীতিমতো অন্যায়। অবশ্য মেলাস্থান থেকে যত দূরে যাওয়া যায়, বাসাভাড়া তত কমে।
বাড়তি বাসাভাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্থানীয় রূপগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ভূঁইয়াও। তিনি বলেন, এই এলাকায় ভাড়া দেওয়ার মতো বাসা অনেক কম। এই সুযোগে অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে থাকেন।
খাবারের দাম বেশি
বাণিজ্য মেলার প্রাঙ্গণে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত খাবারের দোকান আছে। তবে কোনো দোকানেই ১৫০-২০০ টাকার নিচে দুপুরের খাবার পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। বাড়তি দাম এড়াতে স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খান অধিকাংশ স্টলের কর্মীরা। নাভানা ফার্নিচারের হিসাব বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী আলমাস হোসেন বলেন, ‘মেলার বাইরের খাবার তুলনামূলক ভালো ও সাশ্রয়ী। এ কারণে বাইরে থেকে আমরা খাবার আনিয়ে খাই।’
তবে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই মেলা প্রাঙ্গণে থাকা খাবার খেতে হয়। মেলায় অংশ নেওয়া একটি বিরিয়ানির দোকানের ব্যবস্থাপক মো. নাঈম জানান, মেলায় স্টল দেওয়া ও সাজসজ্জায় যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তা তুলে আনতে দাম কিছুটা বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না।
মেলার যে অংশে খাবারের স্টলগুলো বসানো হয়েছে, সেদিকের রাস্তায় প্রচুর বালু উড়তে দেখা গেছে। নাজমুল হোসেন নামের এক খাবার বিক্রেতা বলেন, বালু উড়তে থাকায় মানুষ খেতে বসতে চান না। এখানে পানি দেওয়ার দায়িত্ব ইপিবির। তবে তারা প্রতিনিয়ত আশ্বাস দিলেও কাজটি করছে না। এ ছাড়া রান্নার জন্য নিয়মিত পানি পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বিক্রেতা।
মেলার যে অংশে খাবারের স্টলগুলো বসানো হয়েছে, সেদিকের রাস্তায় প্রচুর বালু উড়তে দেখা গেছে। নাজমুল হোসেন নামের এক খাবার বিক্রেতা বলেন, বালু উড়তে থাকায় মানুষ খেতে বসতে চান না।
এখানে পানি দেওয়ার দায়িত্ব ইপিবির। তবে তারা প্রতিনিয়ত আশ্বাস দিলেও কাজটি করছে না। এ ছাড়া রান্নার জন্য নিয়মিত পানি পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বিক্রেতা।