পাবনায় দুই দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫-৩০ টাকা কমেছে
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় পেঁয়াজের পাইকারি দাম গত দুই দিনে কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। আজ মঙ্গলবার দুই উপজেলার বিভিন্ন হাটে পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে।
দেশি জাতের পেঁয়াজের দাম মাসখানেক আগে থেকে বাড়তে থাকায় পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। গত ২ দিনে ৪ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
সাঁথিয়া উপজেলার করমজা, বোয়ালমারী ও সুজানগর উপজেলার চিনাখড়া হাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছে। এরপরেই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে। তখন দামও কমতে শুরু করে। গতকাল সোমবার পাইকারিতে প্রতি কেজির দাম ১৫ থেকে ১৬ টাকা কমে যায়। আজ মঙ্গলবার আরও ১০ থেকে ১৪ টাকা কমে যায়। এতে গত দুই দিনে দাম কমেছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হলো সুজানগর। এরপরেই সাঁথিয়া। সুজানগর উপজেলায় এবারের মৌসুমে ১৮ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। আর সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার টন পেঁয়াজ। বর্তমানে সুজানগরে ৯২ হাজার ৭২০ টন এবং সাঁথিয়ায় ৭০ হাজার টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে।
আজ সাঁথিয়ার করমজা হাটে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা প্রচুর পেঁয়াজ যেমন নিয়ে এসেছেন, তেমনি সেগুলো কিনতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ব্যবসায়ীও এসেছেন। এই হাটে স্থানীয় পেঁয়াজ বেচাকেনা হয়। হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, আজ এই হাট থেকে কমপক্ষে ২০০ টন দেশি জাতের পেঁয়াজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গেছে।
হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা সাঁথিয়া উপজেলার বকচর গ্রামের কৃষক রেজাউল হোসেন জানান, চার বিঘায় পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমে অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। বাকি পেঁয়াজ এখনো ঘরে রয়ে গেছে। রোববার হাটে ৮৩ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। অথচ আজ প্রতি কেজিতে ৫৮ টাকা পেয়েছেন।
সাঁথিয়ার কুশিয়ারা গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। তিনি জানান, এবার দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে খুব একটা ভালো ফলন পাননি। তাঁর মতো অনেকেরই ফলন খারাপ হয়েছে। তাঁদের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ৩৫ টাকা। তাঁর মতে, পেঁয়াজের শুধু দাম কমলেই হবে না, কৃষককেও বাঁচতে হবে। কৃষক লাভ না পেলে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ পাবেন না।
সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যথাক্রমে রাফিউল ইসলাম ও সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, দুই উপজেলার কৃষকদের ঘরে এখনো ১ লাখ ৬২ হাজার ৭২০ টন পেঁয়াজ রয়েছে। আমদানি শুরু হওয়ার পর থেকে পেঁয়াজের দাম কমছে। পেঁয়াজের আবাদ করতে গিয়ে গত দুই বছর কৃষকেরা লোকসান দিয়েছেন। তাই পেঁয়াজের দামের একটা ভারসাম্য অবস্থা দরকার, যাতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই বাঁচে।