করপোরেট করের শর্ত তুলে নেওয়ার দাবি মেট্রো চেম্বারের
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে করপোরেট করহারের ক্ষেত্রে আরোপিত শর্ত তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দেশের ব্যবসায়ীদের প্রাচীন সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা মেট্রো চেম্বার। সংগঠনটি বলছে, বিগত অর্থবছরে কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রায় সব ক্ষেত্রে করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। কিন্তু শর্তের কারণে কোনো কোম্পানি হ্রাসকৃত এ করহারের সুবিধা পাচ্ছে না। তাই বাস্তবতা বিবেচনায় করহারের ক্ষেত্রে অর্থ আইন, ২০২৩–এর শর্তাবলি বাতিল করা দরকার।
গতকাল বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংগঠনটির নেতারা এ প্রস্তাব করেন। মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল এ আলোচনায় অংশ নেয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
মেট্রো চেম্বার আরও বলেছে, বর্তমানে দেশে কার্যকর করপোরেট করহার অনেক বেশি। কারণ, অননুমোদিত ব্যয় ও উৎসে কর কর্তন অনেক বেশি। তাই এ বিষয়ে এনবিআরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
মেট্রো চেম্বারের পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনার নানা দিক তুলে ধরেন সংগঠনটির ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশন কমিটির চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সভাপতি কামরান টি রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে কামরান টি রহমান বলেন, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এমসিসিআই বিশ্বাস করে, বাজেট ব্যবস্থাপনা গতিশীল ও স্বচ্ছ হলে ব্যবসায়ীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজস্ব প্রদান করবে।
মেট্রো চেম্বার তাদের বাজেট প্রস্তাবে বলেছে, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ জন্য সব ক্ষেত্রেই অটোমেশনে জোড় দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যক্তিগত করদাতারা কর প্রদানের ক্ষেত্রে সব ধরনের দলিলাদি অনলাইনের মাধ্যমে সংযুক্তির সুবিধা পেলে এই অনলাইনভিত্তিক আয়কর রিটার্ন জমাদান পদ্ধতি অনেক জনপ্রিয় হবে। পাশাপাশি ভ্যাট ব্যবস্থাপনা পূর্ণাঙ্গভাবে অটোমেশন করা হলে তাতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।
মেট্রো চেম্বার প্রস্তাব করেছে, কর নির্ধারণ ব্যবস্থা, আপিল, ট্রাইব্যুনাল, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পর্যায়ে প্রচলিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে অনলাইনে শুনানি গ্রহণের বিধান প্রবর্তন করার। এতে ব্যবসায়ীদের অর্থ ও সময়ের অপচয়সহ ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস পাবে।
মেট্রো চেম্বার বলছে, বর্তমানে ৪৩টি ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে ব্যবসার সক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে। তাই রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের পরিসর সীমিত করা দরকার। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল, আনুতোষিক তহবিল এবং শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ওপর করারোপের বিধান বাতিলেরও সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
সংগঠনটির বাজেট প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। তাই আয়কর, ভ্যাট, সম্পূরক কর, শুল্ক হারসহ কাস্টমস ডিউটিগুলো পুনর্বিন্যাস করা জরুরি। সব মিলিয়ে মেট্রো চেম্বারের পক্ষ থেকে আয়কর অধ্যাদেশ বিষয়ে ৪৭টি, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন বিষয়ে ৪৮টি এবং কাস্টমস আইন বিষয়ে ১২টি প্রস্তাব দেওয়া হয়।