শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নে এখন প্রতিদিন খরচ করতে হবে ২,১১৫ কোটি টাকা
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।
১০ মাসের হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) যত টাকা খরচ হয়েছে, বাকি দুই মাসে তার চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এডিপি বাস্তবায়নে চমক নেই। গত জুলাই-এপ্রিল সময়ে এডিপির অর্ধেকও বাস্তবায়িত হয়নি। এই সময়ে এডিপির মাত্র ৪৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। ১০ মাসের হিসাবে বাস্তবায়নের এ চিত্র গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জুলাই-এপ্রিলের মাসের এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা, যা চলতি এডিপিতে বরাদ্দ করা অর্থের ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে মে ও জুন মাসে প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। অর্থাৎ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে প্রতিদিন গড়ে খরচ করতে হবে ২ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে টাকার অঙ্কে আগের মাসের চেয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এপ্রিল মাসে সব মিলিয়ে ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গত কয়েক বছরের খরচের প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে প্রতি মাসে গড়ে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়; কিন্তু এবার তা হয়নি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের বছর হওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি হয়েছে। আবার সরকারের রাজস্ব আদায়ে গতি কম থাকায় প্রকল্পের গতিও কমেছে। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতার অভাবও আছে।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনীতিতে একধরনের সংকট চলছে। রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। তাই প্রকল্পের অগ্রাধিকার বিবেচনা করে এডিপি বাস্তবায়ন করা উচিত।
এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মান বজায় রেখে এডিপি বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
বাস্তবায়নে পিছিয়ে ১০ মন্ত্রণালয়
চলতি অর্থবছরে এডিপিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) ৮টি প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্পে সব মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪২ কোটি টাকা। গত ১০ মাসে বরাদ্দের মাত্র ৪১ কোটি টাকা খরচ করা সম্ভব হয়েছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে এই বিভাগ বরাদ্দের মাত্র ১৭ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পেরেছে।
নির্বাচন কমিশনের চারটি প্রকল্পের বিপরীতে ৬০১ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ১৩৭ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ২৩ শতাংশ। একই অবস্থা পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের। এই বিভাগের ১৫টি প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ৩২৯ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা।
গত জুলাই-এপ্রিল সময়ে সব মিলিয়ে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরাদ্দের ৩৩ শতাংশ বা তিন ভাগের এক ভাগ টাকাও খরচ করতে পারেনি। বরাদ্দের ১০ শতাংশের কম খরচ করা অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন
গত জুলাই-এপ্রিলে এডিপির মাত্র ৪৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, ১০ মাসের হিসাবে এ বাস্তবায়নের হার গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল। তবে টাকার অঙ্কে খরচ হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে সাড়ে ৫৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল। ওই অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে খরচ হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।