পেনশন কর্তৃপক্ষ ও আরজেএসসির চুক্তি, প্রগতিতে ১০ হাজার টাকা চাঁদার সুবিধা
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন স্কিমে নিবন্ধন আরও সহজ করতে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে আরজেএসসিতে নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত পেনশন স্কিমের জন্য আবেদন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা যাচাই হয়ে যাবে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে অর্থ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ও আরজেএসসির মধ্যে সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
সমঝোতা স্মারকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান ও আরজেএসসির নিবন্ধক মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মালেকা খায়রুন্নেছা, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সুলেখা রানী বসু, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে চারটি কর্মসূচির মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলছে। স্কিমগুলো হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষা স্কিম ও স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।
দেশের অন্তত ১০ কোটি মানুষ পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসবেন, এমন প্রত্যাশা সরকারের রয়েছে। বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনা এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই পেনশন স্কিম চালু করা হয়। দেশের বিপুলসংখ্যক নাগরিক পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন, সরকারের এমন প্রত্যাশা থাকলেও প্রথম তিন মাস পর্যন্ত মানুষের সাড়া খুবই কম।
চারটি কর্মসূচির মধ্যে প্রগতিতে এখন পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছেন সাত হাজার জনের কিছু বেশি। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ আরও সহজ করার লক্ষ্যে আরজেএসসির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রগতি স্কিমের মাধ্যমে যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য পেনশন হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। এ স্কিমের অধীন এত দিন ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা পরিমাণে মাসিক অর্থ (চাঁদা) জমা রাখার সুযোগ ছিল। এখন ১০ হাজার টাকা চাঁদা জমারও সুযোগ রাখা হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে জানান, আরজেএসসির সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষরের ফলে নিবন্ধিত এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রগতি পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করা অনেক সহজ হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের যাচাইপ্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যাবে।
দেশের বিভিন্ন ধরনের যৌথ, একক কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দিয়ে থাকে আরজেএসসি। গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত সরকারি এ সংস্থা ২ লাখ ৮৭ হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দিয়েছে।
নিয়ম অনুসারে, প্রগতি স্কিমের চাঁদা কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ এবং মালিকপক্ষ ৫০ শতাংশ হারে বহন করবে। তবে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশ নিতে না চাইলে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা নিজ উদ্যোগে এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আজ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৮৫৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করেছেন। এ কর্মসূচিতে জমা হওয়া অর্থ থেকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছে।