প্রাক্–বাজেট আলোচনায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ১৮০ প্রস্তাব
বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব ও শিল্পবান্ধব করতে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিষয়ে মোট ১৮০টি প্রস্তাব দিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরে এখানকার ব্যবসায়ীদের দুই সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক প্রাক্-বাজেট আলোচনায় সংগঠন দুটি তাদের প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম চেম্বার ১৬৪টি ও মেট্রোপলিটন চেম্বার ১৬টি প্রস্তাব দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সঙ্গে বাজেট বিষয়ে মতবিনিময় করেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। মেট্রোপলিটন চেম্বারের সঙ্গে এনবিআরের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় আগ্রাবাদ হোটেলে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে একই ধরনের শিল্প থাকলে দেশি শিল্পকে বেশি সুবিধা দেওয়া যায় না। কারণ, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। তারা বলবে, এক দেশে দুই আইন।আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, চেয়ারম্যান, এনবিআর
দুটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এ সময় এনবিআরের সদস্য মাসুদ সাদিক ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলীহুসাইন বলেন, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় কর পরিশোধব্যবস্থা এবং আগাম কর ফেরত আনার উপায় সহজ করা দরকার। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুধু একাংশে শুল্কসুবিধা না দিয়ে পুরো প্রকল্পের সব ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ অর্থনীতির অস্থিতিশীল সময়ে বেসরকারি খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা চান। তিনি সাধারণ করদাতার করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকায় উন্নীত করা এবং ভ্যাটহার এক অঙ্কে নামিয়ে সর্বোচ্চ ৮ ও সর্বনিম্ন ৪ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বলেন, রপ্তানি কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে আরও স্ক্যানার মেশিন বসানো দরকার। অফ ডকেও স্ক্যানার মেশিন বসানো উচিত। রাজস্ব বোর্ডকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক ও বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানির সময় পুরোনো জাহাজের ওজনের ওপর শুল্ক–কর দিই। আবার জাহাজের প্রতিটি পণ্যের ওপর শুল্ক–কর দিচ্ছি।’ বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি।
কনফিডেন্স সিমেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ কড়াকড়ির পরও কীভাবে বিদেশি ফলে বাজার সয়লাব হয়ে যাচ্ছে? সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি টনপ্রতি ৪৩ ডলার হলেও শুল্ক–কর দিতে হচ্ছে ৬০ ডলার দরে। এই অসংগতি দূর করার আহ্বান জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পর এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে একই ধরনের শিল্প থাকলে দেশি শিল্পকে বেশি সুবিধা দেওয়া যায় না। কারণ, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। তারা বলবে, এক দেশে দুই আইন। তিনি বলেন, ‘দক্ষ জনশক্তি ও উন্নত মানুষ তৈরিতে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কর জালের আওতা বাড়াতে চাই। তা আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে।’
আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, এনবিআরের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩৭ লাখ। ২০২০ সালের জুনে এই সংখ্যা ছিল ২১ লাখ। ২০২০ সালের জুনে ভ্যাট রিটার্ন জমার সংখ্যা ছিল ২ লাখ। তা এখন ৫ লাখের কাছাকাছি।
এদিকে অন্য মতবিনিময় সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনাকারী বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর জন্য কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি ন্যূনতম করহার সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব দেন। বেসরকারি কোম্পানির করভার সাড়ে ২৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন তিনি। এ ছাড়া ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে কর পরিশোধের বিদ্যমান বিধান শিথিল করে এই হার ৫ শতাংশে নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।