১০০ টাকার মুঠোফোন সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের মোট কর ৩৯ টাকা
সেবার মূল্য বৃদ্ধি করায় গ্রাহকেরা মুঠোফোনে অর্থ ব্যয় কমিয়ে দিলে খাতের প্রবৃদ্ধি ও সরকারের রাজস্ব আয়—দুটোই কমবে।
মুঠোফোন সেবা ব্যবহারে নতুন করে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বৃদ্ধি করায় সাধারণ গ্রাহকের ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। তারা বলেছে, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও গ্রাহকের চাপের কথা বিবেচনা করে বাড়তি শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানীতে বাজেট–উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এসব কথা বলেছে। এতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ গ্রাহক ও টেলিযোগাযোগ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেবার মূল্য বৃদ্ধি করায় গ্রাহকেরা মুঠোফোনে অর্থ ব্যয় কমিয়ে দিতে পারেন। এতে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রবৃদ্ধি ও সরকারের রাজস্ব আয়—দুটোই কমবে।
গত দুই বছরে দেশে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবসার খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে টানা ছয় প্রান্তিকে মোবাইল অপারেটরগুলোর আয় কমেছে। এসবের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর।সাহেদ আলম, প্রধান, করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ, রবি আজিয়াটা
সংবাদ সম্মেলনে অ্যামটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার, রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তাইমুর রহমান ও গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন উপস্থিত ছিলেন।
রবির করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের প্রধান সাহেদ আলম বলেন, গত দুই বছরে দেশে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবসার খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে টানা ছয় প্রান্তিকে মোবাইল অপারেটরগুলোর আয় কমেছে। এসবের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ও অর্থবিলে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেগুলো দেশের সাধারণ মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়াবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অর্থবিলের মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে আরও ৫ শতাংশ কর আরোপ করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিকম কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভয়েস ও ডেটা সেবায় ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং সিম সংযোগের ওপর বাড়তি ১০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপ করা হয়েছে।
সংগঠনটি মনে করে, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও গ্রাহকের চাপের কথা বিবেচনায় বাড়তি শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
এসবের মাধ্যমে নতুন করে গ্রাহকদের ওপর আরও করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান। তিনি বলেন, এর ফলে ১০০ টাকার মুঠোফোন সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের সর্বমোট কর দিতে হবে ৩৯ টাকা, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।
এ প্রসঙ্গে রবির কর্মকর্তা সাহেদ আলম বলেন, বাংলাদেশে মুঠোফোন সেবার ওপর করহার এ অঞ্চলের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মোবাইল অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০০ টাকা আয় করলে তার ৫৮ টাকাই সরকার পাবে বিভিন্ন ধরনের কর ও ফি বাবদ। এমন পরিস্থিতিতে যৌক্তিক কর নির্ধারণের মাধ্যমে ভোক্তার মুঠোফোন সেবা ব্যবহার বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি।
গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন বলেন, যেখানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, সেখানে উল্টো শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার বিরোধী।
অনুষ্ঠানে অ্যামটব জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে একেকজন মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৬ জিবি ডেটা ব্যবহার করেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই পরিমাণ ২৭-২৯ জিবি। অন্যদিকে দেশের আট কোটি গ্রাহক এখনো ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়েছেন।
সুতরাং দেশে গ্রাহক পর্যায়ে ডেটার ব্যবহার বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে বলে জানান অ্যামটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার। তিনি বলেন, সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সরকারের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব মিলবে। তবে করের পরিবর্তে ডেটার ব্যবহার বাড়িয়েই এই রাজস্ব আদায় সম্ভব।