সারা বিশ্ব থেকে উচ্চশিক্ষিত কর্মী নেবে জাপান

অভিবাসী নেওয়ার প্রতিযোগিতায় এবার নাম লেখাল জাপান। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও উচ্চ আয়ের মানুষদের টানতে অভিবাসন আইনে পরিবর্তন আনছে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশ জাপান। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

উচ্চ দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের আকর্ষণ করতে জাপান দুটি নতুন ভিসা নিয়ে আসছে—জাপান সিস্টেম ফর স্পেশাল হাইলি স্কিলড প্রফেশনালস (জে-স্কিপ) ও জাপান সিস্টেম ফর ফিউচার ক্রিয়েশন ইন্ডিভিজ্যুয়াল ভিসা (জে-ফাইন্ড)।

যেসব বিদেশি গবেষক ও প্রকৌশলীর বার্ষিক আয় ১ লাখ ৪৮ হাজার ডলার এবং যাঁদের স্নাতকোত্তর ও ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

জাপান সরকার আরও বলেছে, যেসব তরুণের প্রভূত সম্ভাবনা আছে, তাঁদের জাপানে যাওয়া আরও সহজ করা হবে।

জে-ফাইন্ড

জে-ফাইন্ড ভিসার মাধ্যমে জাপান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের দীর্ঘ সময় থাকার অনুমতি দেবে। এ সময় তারা সে দেশের চাকরি খুঁজতে পারবেন। এমনকি তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও জাপানে থাকতে পারবেন।

শেষ পাঁচ বছরের মধ্যে জাপানের নির্ধারিত বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা মেধাবী শিক্ষার্থীরা জাপানে আসার সময় ১ হাজার ৪৮০ ডলার নিয়ে এলে এই ভিসা পাবেন। এই ভিসায় তাঁরা জাপানে দুই বছর পর্যন্ত থাকতে পারবেন। চাকরি খুঁজতে পারবেন।

এ ক্ষেত্রে জাপান সরকার বেশ কিছু র‍্যাঙ্কিং ব্যবহার করবে—কিউএস টপ ইউনিভার্সিটিজ, দ্য টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস ও সাংহাইয়ের জিয়াও টং ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস।

বর্তমানে স্নাতকেরা জাপানে স্বল্পমেয়াদি অবস্থানের সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে তাঁরা জাপানে ৯০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারেন। তবে জে-ফাইন্ড ভিসা দুই বছর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে।

জে-স্কিপ

গবেষক, প্রকৌশলী, উচ্চপর্যায়ের ব্যবস্থাপ—এই শ্রেণির মানুষেরা জে–স্কিপ ভিসার আবেদন করতে পারবেন। নতুন এই ভিসার আওতায় এই শ্রেণির মানুষেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে ব্যবহৃত হবেন। শুধু আয় ও কাজের অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ করলেই চলবে।

বর্তমান ব্যবস্থায় অর্থাৎ প্রেফারেনশিয়াল ইমিগ্রেশন ট্রিটমেন্ট সিস্টেমের আওতায় যখন কেউ ৭০ নম্বর পান, তখন তাঁকে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখন মূলত একাডেমিক যোগ্যতা, গবেষণা ও জাপানি ভাষায় দক্ষতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়।

যাঁরা প্রথম স্তরের পেশাদার হিসেবে জাপানে থাকার যোগ্যতা অর্জন করবেন, তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য জাপানে থাকতে পারবেন এবং নিজের জায়গায় কাজ করতে পারবেন। তিন বছর কাজ করার পর দ্বিতীয় স্তরে উত্তীর্ণ হলে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য জাপানে থাকতে পারবেন। তখন তাঁদের কাজে কোনো বাধা থাকবে না।

গবেষক ও প্রকৌশলীদের ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। বার্ষিক আয় হতে হবে ন্যূনতম ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৬ ডলার। অথবা তাঁদের ১০ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং বার্ষিক আয় হতে হবে দেড় লাখ ডলারে বেশি।

জাপান ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসননীতিতে রক্ষণশীল হলেও সম্প্রতি তারা দরজা খুলতে শুরু করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জাপান সরকারের সূত্রে এর আগে জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৪৫ হাজার দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাপান সরকার। কিন্তু এরপর মহামারি শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রতি মাসে মাত্র তিন হাজার শ্রমিক নিয়েছে দেশটি। এ ছাড়া কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দীর্ঘদিন সীমান্তও বন্ধ রেখেছিল দেশটি।

২০২০ সালের শেষ নাগাদ জাপানে সাড়ে ১২ কোটি স্থানীয় জনসংখ্যার বিপরীতে মোট বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ২০ হাজার, যা কর্মক্ষম জনসংখ্যার মাত্র আড়াই শতাংশ।

এদিকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও জাপানের এক চুক্তি অনুযায়ী, জাপানে সাড়ে তিন লাখ দক্ষ কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্প্রতি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে পাঠানো হয়েছে ২ হাজার ৭৪০ জনকে। জাপানি ভাষা শেখানো থেকে শুরু করে কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ করছে ৪২টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র।