অর্থনীতির গতিশীলতা নির্ণয়ে চালু হচ্ছে পিএমআই সূচক

সোমবার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে পিএমআই সূচক সম্পর্কে জানানো হয়ছবি: সংগৃহীত

দেশে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) নামে অর্থনীতির গতিশীলতা নির্ণয়ে নতুন একটি সূচক চালু হতে যাচ্ছে। এ সূচকের মাধ্যমে বোঝা যাবে, দেশের অর্থনীতি কতটা গতিশীল আছে। ফলে এ সূচকের অবস্থা দেখে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে বলে মনে করেন সূচকটি তৈরির সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলো।

ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে এ সূচক প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। আর এতে সহযোগিতা করছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কার্যালয় (এফসিডিও)।

আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এ সূচক তৈরির উদ্দেশ্য ও বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল। বক্তব্য দেন এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পিএমআই হবে দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে একটি সমীক্ষাভিত্তিক সূচক। বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে এ সূচক চালু রয়েছে। সাধারণত কোম্পানির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতি মাসে এ সূচক প্রকাশ করা হয়। ফলে তাতে বাজার বাস্তবতা ও অর্থনীতি সম্প্রসারণ বা সংকোচনসহ নানা বিষয় উঠে আসে।

কী রয়েছে পিএমআই সূচকে

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন ও পরিষেবা—এই চার খাতের ৫০০টির বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে পিএমআই সূচক প্রকাশ করা হবে। শুরুতে বাংলাদেশে প্রান্তিক ভিত্তিতে এ সূচক প্রকাশ করা হবে। পরে তা প্রকাশিত হবে প্রতি মাসে। সূচক তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্যের ক্রয়াদেশ, মজুত, উৎপাদন, সরবরাহ পরিস্থিতি ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হবে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এ সূচক প্রকাশ করা হবে।

পিএমআই সূচকটি শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হবে। আগের মাসের তুলনায় স্কোর ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং স্কোর ৫০-এর নিচে হলে সংকোচন বোঝাবে। আর স্কোর ৫০ থাকলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট খাতে ওই মাসে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

যাঁরা উপকৃত হবেন

পিএমআই সূচকের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী ও বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন বলেন জানান ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। এ ছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এমন বাস্তবতায় এ দেশে দেশি-বিদেশি বিপুল বিনিয়োগ দরকার হবে। কিন্তু বিনিয়োগের আগে ব্যবসা-বাণিজ্যের হালনাগাদ তথ্য জানতে চান বিনিয়োগকারীরা। এ ক্ষেত্রে পিএমআই সূচক তাঁদের জন্য সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোও সহজে নির্ণয় করা যাবে।

এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে পিএমআই সূচক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এখন থেকে বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি শিল্প খাতের জন্য এই সূচক নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হবে। এটি চালুর মাধ্যমে আমরা দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ও বিশ্লেষণের একটি নতুন ক্ষেত্রে পা রাখছি।’

কামরান টি রহমান আরও জানান, পিএমআই সূচকের মাধ্যমে দেশের হালনাগাদ অর্থনৈতিক পরিবর্তনের বিষয়ে একধরনের প্রাথমিক সতর্কবার্তা পাওয়া যাবে। এর ফলে নীতিনির্ধারক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন।

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, দেশে বিভিন্ন খাতের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে ব্যবসা, বিনিয়োগ বা আর্থিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যায় পড়েন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেই প্রেক্ষাপটেই এ সূচক প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ও সহজে বোধগম্য কিছু তথ্যের ভিত্তিতে সূচকটি তৈরি ও প্রকাশ করা হবে।