সরকার অনেক সময় বেসরকারি খাতের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না: অর্থ প্রতিমন্ত্রী
দেশের বেসরকারি খাত যে গতিতে চলে, সরকার অনেক ক্ষেত্রে সেই গতিতে চলতে পারে না। তবে সরকার সব সময় বেসরকারি খাতবান্ধব এবং বিভিন্ন ধরনের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসবের কল্যাণে দেশের অর্থনীতিতে গতি আসছে।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত ‘ড্রাইভিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুসন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক মধ্যাহ্নভোজ সভায় এসব কথা বলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানান, তিনি নিজেও একসময় বেসরকারি খাতে কাজ করেছেন। এই খাতের গতিপ্রকৃতি ও চাওয়া-পাওয়া তিনি বুঝতে পারেন। ফলে এই খাতের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা বোধ করেন না তিনি।
অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বা এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। তখন বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা হারাবে। এ পরিস্থিতিতে দেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।
সরকার ২০৩১ সালের মধ্যে নগদ অর্থবিহীন লেনদেনব্যবস্থা গড়ে তোলার যে লক্ষ্য নিয়েছে, তা অ্যামচেম সমর্থন করে। এ ক্ষেত্রে ভিসা ও মাস্টারকার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে সৈয়দ এরশাদ আহমেদ উল্লেখ করেন। বলেন, এ বিষয়ে তাদের বিপুল অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারে। তাঁর পরামর্শ, দেশের সব ক্ষেত্রে নগদ অর্থের লেনেদেন নিরুৎসাহিত করতে হবে। তা না হলে নগদ অর্থবিহীন লেনদেনে গতি আসবে না। সেই সঙ্গে সব খাতে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সৈয়দ এরশাদ বলেন, এখন মেট্রোরেলের টিকিট ক্রয় ও সেতুর টোল পরিশোধ করতে হয় স্টেশনে গিয়ে। এ ব্যবস্থা উন্মুক্ত করা হোক। মাস্টারকার্ড ও ভিসার মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে শিক্ষার মানোন্নয়নে জোর দিতে হবে। শিক্ষা ও শিক্ষক—উভয়ের মানোন্নয়ন করতে হবে। সে জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ ছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধিতে পণ্যসম্ভার বহুমুখী করায় গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অ্যামচেমের সদস্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্যরা অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানকে বাজেট ও করসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এসব প্রশ্নের বেশির ভাগ অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট হওয়ায় তাঁর পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত দরকার।
ঋণের সুদহার প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, একসময় নয়-ছয় সুদহার ছিল। কিন্তু তখনো অনেকে ঋণখেলাপি হয়েছে। এখন সুদহার মোটামুটি বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। দেখা যাক, এই বাজারভিত্তিক সুদহার কতটা কাজে আসে।
অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতির অংশ। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশও তার বাইরে থাকতে পারবে না। কারণ, আমরা রপ্তানিমুখী অর্থনীতি। তবে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ একভাবে বেঁচে গেছে।’
অনুষ্ঠানে অ্যামচেমের সদস্য ও অর্থনীতিবিদেরা অংশ নেন।