সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী
মূল্যস্ফীতি উদ্বেগের কারণ নয়
জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, অর্থনীতির সূচকগুলো বাড়ছে।
মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন যখন বিপর্যস্ত, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তখন তা নিয়ে চিন্তিত নন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি দেশের মানুষের মূল উদ্বেগের কারণ হতে পারে না।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক পণ্যের দামই নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর রমজানে নতুন করে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না।আহসানুল ইসলাম, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, মানুষের মূল উদ্বেগের বিষয় এখন মূল্যস্ফীতি, তা নিয়ন্ত্রণে সম্মেলনে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে অর্থমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এটাই (মূল্যস্ফীতি) একমাত্র উদ্বেগ হয়ে গেল? আর কিছু নয়?’ এরপর তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় একমাত্র নয়, বরং মূল উদ্বেগের বিষয় মূল্যস্ফীতি। অর্থমন্ত্রী তখন আবার বলেন, মূল উদ্বেগই বা হয় কী করে। এক কোটি মানুষকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন পণ্য পাচ্ছেন তাঁরা। অর্থনীতির সূচকগুলোও বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা আগের মাস ডিসেম্বরেও ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার মাঝখানে অর্থমন্ত্রী হঠাৎ বিএনপি নিয়েও কথা বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। যেমন বিএনপির মহাসচিব তাঁর জায়গা থেকে বলেছেন যে তিনি কোনো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নতি মানুষের মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তা রাস্তায় ঘুরলেই দেখা যাবে।
আয়কর আদায়ে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, দিয়েছি। তাঁরা সহায়তা করবেন। তাঁরা যেটা করছেন সেটা করবেন, আরও ভালো করে করবেন।’
সূত্রগুলো জানায়, সম্মেলনে রিজার্ভ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে অধিকতর জনমুখী ও জনপ্রিয় করতে আন্তমন্ত্রণালয় ও জেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকারও। এ সময় তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, সরকার অনেক সময় অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তাহলে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়াই হয় কেন? জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় অনুমান থেকে অনেক কাজ করা হয়, দিন শেষে হয়তো মনে হয় সিদ্ধান্তটি ঠিক হয়নি। তিনি আরও বলেন, রাজনীতি ও উন্নয়ন সব সময় অঙ্ক কষে হয় না। প্রকল্প যাচাই করার ক্ষেত্রে কোনো সময় ভুল হলেও হতে পারে। তবে ভুল ও অন্যায় এক জিনিস নয়।
প্রকল্প প্রণয়নের দায়িত্ব মূলত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের জানিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে এলাকার কোনো প্রয়োজন থাকলে ডিসিরাও প্রকল্পের প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারেন, এরপর সরকার তা বিবেচনা করবে।
এদিকে সম্মেলন শেষে ভিন্ন এক ব্রিফিংয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক পণ্যের দামই নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর রমজানে নতুন করে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা কমেছে, যা আজ-কালের মধ্যে পাওয়া যাবে। অন্য কোনো পণ্যের সরবরাহব্যবস্থায়ও সংকট থাকবে না।
মৌসুমের সময়ও পেঁয়াজের দাম কেন ১০০ টাকার বেশি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহসানুল ইসলাম বলেন, কৃষকেরা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দাম পাচ্ছেন, যা গত বছর অর্ধেক ছিল। ভালো দাম পাওয়ায় আগামী বছর কৃষকেরা পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহী হবেন।
ডিসিদের পরামর্শে বিদ্যমান ১৯৫৬ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনকে যুগোপযোগী করা হবে বলে জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। শিগগির বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে এ বিষয়ে বৈঠক করা হবে। আর টিসিবির কার্ডধারীদের তালিকা আগামী দুই মাসের মধ্যে হালনাগাদ করা হবে। তালিকাটি করোনার সময় করা হয়েছিল।
ডিসি সম্মেলনের অধিবেশন শেষে জানতে চাইলে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, অসংগতি থাকায় অন্তত ২৫ শতাংশ বিদ্যমান কার্ডধারী বাদ পড়বেন।’