কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সৎ করদাতাদের তিরস্কৃত করা হচ্ছে: সিপিডি

বাজেট পর্যালোচনা পেশ করছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনপ্রথম আলো

বাজেটে আবারও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করেছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডি বলেছে, আয়করের সর্বোচ্চ হার যেখানে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হলো, সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আবার তাঁদের কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। এটা নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যাঁরা নিয়মিত কর দেন, এর মধ্য দিয়ে তাঁদের তিরস্কৃত করা হচ্ছে।

আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে পর্যালোচনায় এসব কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

আরও পড়ুন

পর্যালোচনায় ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেট কোন সময় দেওয়া হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি; সেই সঙ্গে রিজার্ভ ক্ষয় হচ্ছে। অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকই অস্বস্তিকর অবস্থায় আছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এসব সংকট সমাধানে বাজেটে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, অর্থনীতিতে এখন যেসব সমস্যা আছে, প্রথমত, সেগুলো মেনে নিয়ে তার গভীরতা বুঝতে হবে। এরপর সমাধানের দিকে যেতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো ঘোষণা দেখা গেল না।

বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা-ও অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী।

আরও পড়ুন

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে হারে পণ্য মূল্য বেড়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ চাপের মধ্যে পড়ে যাবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি নেওয়া হবে। কিন্তু বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সেই নীতি থেকে সরে এল দলটি। এটি আওয়ামী লীগের দর্শনেরও বিরোধী। দুষ্টচক্রের মাথায় হাত বুলিয়ে টাকা অর্থনীতিতে আনা হবে; এটা খুবই দুঃখজনক। এর মাধ্যমে যারা সততার সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করছে বা সৎভাবে চলছে, তাদের কী ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘অর্থনীতিকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারকে আরও ব্যয় সংকোচন করতে হবে, তা না হলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সময় আরও পিছিয়ে যাবে। এবারের বাজেটের মাধ্যমে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। বিভিন্ন সেবার খরচ ও জ্বালানি মূল্য বাড়বে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও দেশে কালোটাকা ধরার পদ্ধতি নেই। আমাদের রাজস্ব নীতি ব৵ক্তি ও গোষ্ঠীনির্ভর; সে জন্য সংস্কার হয় না।’

অনুষ্ঠানে সিপিডির বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।