জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমে হচ্ছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটে এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আর এটি ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আজ সোমবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের বৈঠকে চলতি অর্থবছরের জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিমউদ্দিনসহ আরও সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠক শেষে জানতে চাইলেও অর্থ উপদেষ্টা এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সচিবেরাও কোনো কথা বলেননি।
সরকারের ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অবশ্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস থেকে বেশি। যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত ২২ অক্টোবর পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সাম্প্রতিক বন্যার কারণে এই অর্থবছর শেষে দেশের প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৪ শতাংশ। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত সেপ্টেম্বর মাসে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ দুটি লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনে থাকতে পারে। যতটুকু কমিয়েছে, তা অর্জন করাও কঠিন হবে। এ জন্য পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, অর্থনীতি এখনো স্বস্তিকর অবস্থায় নেই। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়নি।সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মূল্যস্ফীতির হারও সংশোধন করা হচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আজ সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন কাউন্সিলের বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, বর্তমান অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৯ শতাংশের নিচে রাখা হবে। এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
জানা গেছে, বাজেট কাটছাঁট এবার অন্যবারের তুলনায় কম হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর তেমন উদ্যোগ নেওয়া হবে না। তবে আগের সরকারের আমলে ব্যাংক খাত থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার যে প্রবণতা ছিল, তা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বেরিয়ে আসতে চায়। এ সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেওয়ায় বেশি মনোযোগ দেবে বলে জানা গেছে।
আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্তের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণের মাত্রা কত হওয়া উচিত, তা উল্লেখ ছিল। আইএমএফ বলেছিল, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ এখন যা আছে, তা ২০২৬ সালের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ কমাতে হবে। এর পর থেকে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেতিবাচক হয়ে যায়। সে জন্য সরকারকে এখন সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ানোর কৌশল নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা করেছে কাউন্সিল। এই বাজেটের আকার হতে পারে ৮ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির হারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ দুটি লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনে থাকতে পারে। যতটুকু কমিয়েছে, তা অর্জন করাও কঠিন হবে। এ জন্য পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, অর্থনীতি এখনো স্বস্তিকর অবস্থায় নেই। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও সেটাকে যথেষ্ট বলা যাবে।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে আসবে বলে আশাবাদী হতে চাই। কিন্তু রাজস্ব নীতি, বাজার ব্যবস্থাপনাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলোর মধ্যে এখনো সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সুদের হারও বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছে।’