উন্নয়ন প্রকল্প
দুই মাসে ১% টাকাও খরচ করেনি ১৭ মন্ত্রণালয়
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জননিরাপত্তা বিভাগ জুলাই-আগস্ট মাসে তাদের ৩০টি প্রকল্পে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি।
চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। প্রথম দুই মাস সার্বিকভাবে ৩.৮৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
বরাদ্দের ১ শতাংশের কম খরচ করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পানিসম্পদ, নৌপরিবহন, শিল্প, ধর্ম, প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
জুলাই ও আগস্ট যেন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের মধুচন্দ্রিমা উদ্যাপনের মাস। প্রতিবছর এই সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয় না বললেই চলে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা হিসাব–নিকাশ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জননিরাপত্তা বিভাগের ৩০টি প্রকল্পে এক টাকাও খরচ হয়নি। এসব প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা আছে ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জুলাই-আগস্ট মাসের হালনাগাদ হিসাবে এই চিত্র উঠে এসেছে। আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জননিরাপত্তা বিভাগের ১৮ প্রকল্পে ১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ১৪ প্রকল্পে ৩০৩ কোটি টাকা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৭ প্রকল্পে ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, সব মিলিয়ে ১৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গত জুলাই ও আগস্ট মাসে তাদের বরাদ্দের অনুকূলে ১ শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেনি। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে ৩৫৩টি প্রকল্প আছে, যা মোট এডিপির মোট প্রকল্পের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ।
বরাদ্দের ১ শতাংশের কম খরচ হয়েছে, এমন মন্ত্রণালয়গুলো হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পানিসম্পদ, নৌপরিবহন, শিল্প, ধর্ম, প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। আর বিভাগগুলো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নেয়। তা থেকে উন্নয়ন প্রকল্পও বাদ যায়নি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন, জরুরি না হলে বিদেশ সফর ও গাড়ি কেনা বন্ধ, আসবাব কেনায় আরও সাশ্রয়ী হওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রতিফলন পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে।
চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ১ হাজার ৩৬৩টি। প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে সার্বিকভাবে মাত্র ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
টাকার অঙ্কে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে ৯ হাজার ৫৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। তখন এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।
দেশের অর্থনীতিতে চাপের পরিস্থিতিতে সরকার সম্প্রতি প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণিতে ভাগ করেছে। ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্পকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মানে, চলতি এডিপিতে যা বরাদ্দ আছে, তা পুরোটাই খরচ করত হবে। ‘বি’ শ্রেণিতে থাকা প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ (দেশজ উৎসের অর্থ) ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।
‘সি’ শ্রেণির প্রকল্পকে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘এ’ শ্রেণিতে ৬৪৬টি প্রকল্প, ‘বি’ শ্রেণিতে ৬৩৬টি প্রকল্প এবং ‘সি’ শ্রেণিতে ৮১টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৯টি প্রকল্প কোনো শ্রেণিতে রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে, এমন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকার বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ জন্য অনেক প্রকল্প এবার কিছুটা শ্লথ রাখা হচ্ছে।