সাত কারণে অর্থনীতি নিয়ে এত দুশ্চিন্তা
অর্থনীতির সংকট বিশ্বব্যাপীই। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দুশ্চিন্তা তো আগেই ছিল, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনিশ্চয়তা। কিন্তু অর্থনীতির এই দশা কি কেবলই বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের প্রভাব? বাংলাদেশেরও কি কোনো ভুল ছিল না? সরকার থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি আসলে বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের কারণে হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা সরকারের এই দাবি পুরোপুরি মানতে নারাজ। বরং সমস্যার স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনীহার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সংকট পরে অনেক বেড়ে গেছে।
২০২২ সাল যে খুব ভালো যাবে না, শুরুতেই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন। যেমন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনবিসি ওয়াল স্ট্রিটের ৪০০ প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা, সম্পদ বিশ্লেষক ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপকের মধ্যে একটি জরিপ করেছিল। জরিপে মোটাদাগে ২০২২ সালের জন্য পাঁচটি সংকটের কথা বলা হয়েছিল। যেমন: ১. প্রধান হুমকি বা দুশ্চিন্তার বিষয় হবে মূল্যস্ফীতির চাপ। ২. অমিক্রন কতটা প্রাণঘাতী, তার ওপরই নির্ভর করবে অনেক কিছু। ৩. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বেড়ে গেলে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ডলারেরও দর বাড়বে। ৪. নতুন বছরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কম মুনাফা পাওয়া যাবে। ৫. অর্থনীতি এবার ঘুরে দাঁড়াবে ঠিকই, তবে সব দেশে তা সমভাবে হবে না। দেশে-দেশে ও মানুষে-মানুষে বৈষম্য বাড়বে।
অর্থনীতির সংকট বিশ্বব্যাপীই। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দুশ্চিন্তা তো আগেই ছিল, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনিশ্চয়তা। কিন্তু অর্থনীতির এই দশা কি কেবলই বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের প্রভাব? বাংলাদেশেরও কি কোনো ভুল ছিল না?
তখন আসলে কেউই ধারণাই করতে পারেননি যে বহু বছর পর ইউরোপে আবার একটা যুদ্ধ দেখতে হবে। আর সেই যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওলটপালট ঘটবে। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অর্থনীতির কোনো দুশ্চিন্তারই অবসান ঘটায়নি, বরং অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কোভিড-১৯ দুর্বল হওয়ার কারণে বিশ্ব যখন পুনরুদ্ধারের পথে, তখনই যুদ্ধ ছিল অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত। আর কে না জানে, অর্থনীতির অন্যতম বড় শত্রু অনিশ্চয়তা। এর সঙ্গে বাংলাদেশে যুক্ত ছিল আড়াল করে রাখা বেশ কিছু পুরোনো সমস্যা।
১. ইঙ্গিত ছিল ২০১৯ সালেই
‘প্রায় সব সূচক এখন নিম্নমুখী’—এই শিরোনামে রিপোর্টটি প্রথম আলোতেই ছাপা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘রপ্তানি আয়ে কোনো প্রবৃদ্ধিই নেই, আমদানিতেও একই অবস্থা, রাজস্ব আয়েও বড় ঘাটতি। একমাত্র স্বস্তির সূচক প্রবাসী আয়। এ ছাড়া অর্থনীতির আর কোনো সূচকই ভালো নেই।’ সেই প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মন্তব্য করেছিলেন, ‘সার্বিকভাবে অর্থনীতির যে চাঙাভাব আশা করছি, তা আর থাকবে না। আমরাও গর্তের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।’
আসলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থনীতির সূচকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছিল। সেই অর্থনীতি যখন কপালের ভাঁজ বাড়াচ্ছিল, তখনই হানা যায় কোভিড-১৯। এতে সারা বিশ্বের অর্থনীতির গতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যে সমস্যা শুরু হয়েছিল, তা আড়ালেই থেকে যায় তখন।
২. কোভিড ও ইউরোপের যুদ্ধ
বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছিল ৮ মার্চ। মার্চের শেষে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হলে অর্থনীতিও ধীরে ধীরে উত্তরণের পথে যেতে শুরু করেছিল। তখন সরকার ঝুঁকি নিয়ে অর্থনীতি সচল করার সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়, খোলা রাখে পোশাক খাত, ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ প্রণোদনা তহবিলের ঘোষণা দেয়।
কোভিডের প্রভাব ছিল ২০২১ সাল জুড়েও। চালের দাম ছিল বেশ চড়া। ফলে বড় চাপের নাম ছিল মূল্যস্ফীতি। আবার বছরের শেষের দিকে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর প্রভাবে বৃদ্ধি পায় পরিবহন ভাড়া। এতে আরেক দফা দাম বাড়ে নিত্যপণ্যসহ প্রায় সবকিছুরই। কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপীই অর্থনীতিতে ওই বছরের আলোচিত সূচক ছিল মূল্যস্ফীতি।
২০২২ সালের শুরুতে মনে হয়েছিল অর্থনীতির এখন পুনরুদ্ধারের পালা। তখনই মূল্যস্ফীতির চাপ ছিল মূলত দুটি কারণে। যেমন: করোনা প্রায় চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন ছিল কম, দ্বিতীয়ত, সরবরাহব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। ফলে পণ্য চলাচলের সংকট দেখা দেয়, জাহাজভাড়াও ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
এ রকম এক পরিস্থিতির মধ্যেই ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে রাশিয়া। রাশিয়ার কৃষিপণ্যের ওপর অনেক দেশ নির্ভরশীল। আর ইউরোপ নির্ভর করে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর। ফলে যুদ্ধ আরেক দফা বাড়িয়ে দেয় পণ্যমূল্য, সরবরাহব্যবস্থা দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়, বেড়ে যায় সব ধরনের জ্বালানির দাম। আর এসবের অনিবার্য প্রভাব হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।
৩. বিনিময় হার ধরে রাখা
স্বাধীনতার পর থেকে ১২ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য মধ্যবর্তী মুদ্রা ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড। ১৯৮৩ সালে পাউন্ডের পরিবর্তে মার্কিন ডলারকে বেছে নেওয়া হয়। আর ২০০৩ সালের মে মাস থেকে বাংলাদেশি মুদ্রার ভাসমান বিনিময় হার চালু করা হয়। এ সময় থেকেই চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ডলার বিক্রি ও তদারকির মাধ্যমে বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকার মান কমা মানেই অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গেছে—এ রকম একটি মনস্তাত্ত্বিক ধারণা থেকেও টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে রপ্তানি খাতে অবস্থান ধরে রাখতে চীন ব্যাপকভাবে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে। এতে প্রতিযোগী প্রায় সব দেশই নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ তখনো টাকার দর ধরে রেখেছিল। ধরে রাখা সেই বিনিময় হার নিয়েই বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় বেশি দরেই পণ্য আমদানি করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এতে মূল্যস্ফীতিও আমদানি হয়। আবার বিনিময় হার কম থাকায় প্রবাসী আয়ও বৈধ পথে আসা কমে যায়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্য হয়েই ডলারের দর বাড়াতে টাকার অবমূল্যায়ন করে। যেমন ২০২২ সালে প্রথম দিনে আন্তব্যাংকে যে ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা, সেই ডলার এখন প্রায় ১০৬ টাকা। অর্থাৎ এক বছরেই টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৩ শতাংশের বেশি।
৪. নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত
করোনার আগে বাংলাদেশের পরিচয় ছিল উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ। আবার একই সঙ্গে বাংলাদেশ নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাতের দেশ। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত এখন ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আর নেপালে এ অনুপাত ২৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং লাওসের ১৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। কর-জিডিপি অনুপাতে পিছিয়ে আছে কেবল দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা, ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
এই নিম্ন রাজস্ব আদায়ের কারণে কোভিডের সময় বাংলাদেশের দেওয়া প্রণোদনা তহবিলের বড় অংশই ছিল মূলত ব্যাংকঋণনির্ভর। আবার নিম্ন আয়ের কারণে জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে এখন ভর্তুকিও দিতে পারছে না। ফলে ৪১ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বেড়েছে।
৫. রিজার্ভ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
রিজার্ভ থেকে অর্থ বিনিয়োগের চিন্তা খুবই বাজে ও বিপজ্জনক। সামনে কী ধরনের সংকট আসবে, তা যেমন জানা নেই, করোনার টিকা কিনতে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। সুতরাং রিজার্ভ ধরে রাখাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।’
বেশি দিন আগের কথা নয়। গত ২০২০ সালের নভেম্বরেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতি যখন মন্দায়, তখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধিকে স্বস্তিদায়ক মনে করে এমনকি রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যায় কি না, তা পর্যালোচনা করে দেখেছিল সরকার। বেসরকারি খাতের কিছু উদ্যোক্তাও রিজার্ভ থেকে ঋণ পেতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তখন ভারতেও অবকাঠামো খাতে রিজার্ভের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) তাতে সম্মতি দেয়নি।
২০২০ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম আলোতেই ‘৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ স্বস্তির না দুর্ভাবনার’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘বড় সংকটের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কতটা কার্যকরী হয়, তার উদাহরণ হচ্ছে ২০০৮-০৯ সময়ের ব্রাজিল ও মেক্সিকো। ওই সময়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্রাজিল ভালো করলেও মেক্সিকো ছিল ব্যর্থ। কারণ, অর্থনীতিকে ঠেকা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ ব্রাজিলের ছিল, যা মেক্সিকোর ছিল না। সে সময় ব্রাজিল তার মুদ্রার মূল্যমান ধরে রাখতে পেরেছিল, মেক্সিকোর পরিস্থিতি ছিল উল্টো। সুতরাং রিজার্ভ থেকে অর্থ বিনিয়োগের চিন্তা খুবই বাজে ও বিপজ্জনক। সামনে কী ধরনের সংকট আসবে, তা যেমন জানা নেই, করোনার টিকা কিনতে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। সুতরাং রিজার্ভ ধরে রাখাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।’
বাংলাদেশ রিজার্ভ নিয়ে বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করেনি। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আপত্তির মুখে রিজার্ভ গণনার পদ্ধতিরও পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন রিজার্ভ আছে ৩ হাজার ৪০১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এ থেকে আইএমএফের আপত্তির কারণে বাদ যাবে ৮১০ কোটি ডলার। ফলে প্রকৃত রিজার্ভ আরও কমে আসবে।
৬. দুর্বল ব্যাংক খাত
দেশে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা কখনোই খুব ভালো ছিল না। এ খাতে নজরদারি ছিল দুর্বল, খেলাপি ঋণের হার ছিল উচ্চ, সরকারি ব্যাংকের ছিল মূলধন ঘাটতি। আর সাম্প্রতিক প্রবণতা হচ্ছে ব্যাংক দখল এবং নামে-বেনামে নেওয়া ঋণ। সবকিছুরই পেছনে ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা।
সেই ব্যাংক খাত নিয়ে বিপদ এখন আরও বেড়েছে। খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফের হিসাবে, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। রাজনৈতিক কারণে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছিল সরকারের পরিকল্পনায়। সেই ব্যাংক দখল পথ চিনিয়ে দিয়েছিল অনেককে। ফলে এখন আর তাদের সামলাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতের এখন যে নাজুক অবস্থা, তা দীর্ঘ কয়েক বছরের অব্যবস্থা ও দুর্নীতিরই ফল।
৭. আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে প্রথমত বিশ্ববাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়। এলএনজির দরও সব রেকর্ড ভাঙে। ফলে এই বাজারে আর ঢুকতেই পারছে না বাংলাদেশ। জ্বালানির এই সংকট কেবল যুদ্ধের কারণেই হয়েছে, তা বলা যাবে না। বরং অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতাই জ্বালানিসংকটের বড় কারণ।
অনেকের নিশ্চয়ই ২০১৫ সালের কথা মনে আছে। এর আগে বলা হচ্ছিল বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। কিন্তু ওই বছরই সরকারের পক্ষ থেকে বলা শুরু হয় যে গ্যাসের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। যে গ্যাস আছে, তা দিয়ে আর ১৫ বছর চলবে। এরপরই সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কথা জোরেশোরে বলতে শুরু করেছিল। তখনই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, গ্যাস দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রচার করার কারণ হচ্ছে উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করা। শেষ পর্যন্ত তা-ই করা হয়েছে। এভাবেই জ্বালানি খাতকে প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর করার ফলই ভোগ করতে হচ্ছে এখন।
সব মিলিয়ে বছরের শুরু থেকেই অর্থনীতি নিয়ে নানা দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু এখন ভীষণ দুশ্চিন্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘোরতর অনিশ্চয়তা। উচ্চ প্রবৃদ্ধির নেশায় অর্থনীতির অনেক দুর্বলতাই আড়াল করে রাখা ছিল। সংস্কারের কোনো উদ্যোগও ছিল না। কিন্তু অর্থনীতির সংকট শুরু হওয়ায় অর্থনীতির সব ক্ষত একবারেই বের হয়ে এসেছে। সুতরাং বলাই যায়, সবকিছুর জন্যই কোভিড ও যুদ্ধকে দায়ী করা যাবে না। নিজেদের দায় নিতে হবে। আর এটাই হচ্ছে ২০২২ সালের বড় শিক্ষা।