ছয় মাসেই বিদেশি ঋণ শোধ বেড়েছে ৪৯ শতাংশ
গত বছরের শুরু থেকে সরকারের বিদেশি ঋণ গ্রহণ বাড়তে শুরু করেছিল। তবে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসে তা কিছুটা কমে যায়। সরকারের ঋণ গ্রহণ কমলেও বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়ে গেছে। ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় চাপ তৈরি হয়েছে ডলারের বাজার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪৯ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গত ছয় মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সুদ ও আসল মিলিয়ে ১৫৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১০৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৫১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে ঋণের আসল হিসেবে ৯২ কোটি ৬১ লাখ ডলার এবং সুদ হিসেবে ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।
এখন যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ হচ্ছে, তা আগের নেওয়া। নতুন করে বিদেশি ঋণের প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা ও বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে—এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত। তাহলে রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের( সরকারি ও বেসরকারি) স্থিতি ছিল ৭ হাজার ৫২৬ কোটি ডলার বা ৭৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জানুয়ারিতে সরকারের বিদেশি ঋণ স্থিতি ছিল ৭২ দশমিক ২১ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ২২১ কোটি ডলার, মার্চে তা বেড়ে হয় ৭৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার। জুনে আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলারে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ হচ্ছে, তা আগের নেওয়া। নতুন করে বিদেশি ঋণের প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা ও বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে—এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত। তাহলে রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে না।
এদিকে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় টাকার হিসাবেও ঋণ পরিশোধ অনেক বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ঋণ বাবদ ১৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। গতবার এই সময়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরে একই সময়ে বিদেশি সহায়তার অর্থছাড় কিছুটা বেড়েছে। গত জুলাই–ডিসেম্বরে উন্নয়ন সহযোগীরা সব মিলিয়ে ৪০৬ কোটি ডলার ছাড় করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৭৮ কোটি ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কিছু বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় সার্বিকভাবে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। তবে ঋণ পরিশোধের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরে একই সময়ে বিদেশি সহায়তার অর্থছাড় কিছুটা বেড়েছে। গত জুলাই–ডিসেম্বরে উন্নয়ন সহযোগীরা সব মিলিয়ে ৪০৬ কোটি ডলার ছাড় করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৭৮ কোটি ডলার। তবে এ সময়ে অর্থসহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে অনেক বেশি। গত ছয় মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ঋণ ও অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৭৬ কোটি ডলার।
ডলারের সংকট ও ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়েছে। ১৭ জানুয়ারি মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার। সরকারের বিদেশি ঋণ সরাসরি পরিশোধ করা হয় রিজার্ভের অর্থ দিয়ে। পাশাপাশি ব্যাংকের আমদানি দায় মেটাতেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত।