পাঁচ বছরে বিদেশ থেকে ফেরত আসা প্রতি তিনজনের একজনই চট্টগ্রামের
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শ্রমিক হিসেবে প্রবাসে যাচ্ছেন। বিপুল কর্মসংস্থানের বিপরীতে অনেকে আবার দেশেও ফিরে আসছেন। গত পাঁচ বছরে প্রবাসীদের মধ্যে যাঁরা স্থায়ীভাবে দেশে ফিরেছেন, তাঁদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশই চট্টগ্রাম বিভাগের। অর্থাৎ প্রতি তিনজনের একজনই চট্টগ্রামের। অন্যদিকে প্রবাস থেকে সবচেয়ে কম ফিরেছেন রংপুর বিভাগের মানুষ।
স্থায়ীভাবে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের মধ্যে চট্টগ্রামের পর সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, ৩৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ফেরত আসা প্রবাসীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ খুলনার, ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ ময়মনসিংহের, ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ রাজশাহীর, ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ রংপুরের, ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ সিলেটের এবং ২ দশমিক ৬০ শতাংশ শতাংশ বরিশালের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএসের) আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ ২০২৩ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দেশে ফেরা শ্রমিকদের বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছেন। সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ শ্রমিক সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন। ১৪ শতাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে দেশে ফিরেছেন। এ ছাড়া দেশ ফেরত আসা প্রবাসীদের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, ওমান থেকে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, কাতার থেকে ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ, কুয়েত থেকে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুর থেকে ৩ দশমিক ১২ শতাংশ এসেছেন। তালিকায় বাহরাইন, মালদ্বীপ, লেবানন, ইরাক, ব্রুনেই দারুসসালাম ও দক্ষিণ আফ্রিকাও আছে।
প্রবাসী শ্রমিকেরা কেন দেশে ফিরেছেন সে বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে ফেরতবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, স্বাস্থ্যগত কারণে ৯ দশমিক ২৪, করোনার কারণে ৯ দশমিক ২১, পরিবারের সঙ্গে বসবাসের জন্য ৭ দশমিক ৯৬ এবং কাজ হারানোর কারণে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবাসী বিদেশ থেকে স্থায়ীভাবে ফেরত এসেছেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশ থেকে স্থায়ীভাবে দেশে আসা প্রবাসীদের মধ্যে ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ এসএসসি ও সমমান পাশ। এ ছাড়া প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ, এইচএসসি ও সমমান পাস ৫ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ২৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়নি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বছরে ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে যান ২০১৭ সালে। ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে যান ১১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি কর্মী। সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ২০২৩ সালে বিদেশে গেছেন ১৩ লাখের বেশি কর্মী। তবে বিপুল বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মধ্যে অনেক প্রবাসী ‘ব্যর্থ’ হয়ে দেশে ফিরছেন।
গত মাসে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সংসদকে জানিয়েছেন, ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৮ বছরে ১ কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার ৩২৪ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন।