বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) বা ভবন নির্মাণ নীতিমালা ২০২০ সালে গেজেটভুক্ত হলেও তা আসলে ১৪ বছরের পুরোনো। এ কারণে ভবন নির্মাণে অধিক শক্তিশালী রড ও উন্নত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই দেশের প্রয়োজনে বিল্ডিং কোড হালনাগাদ করার পাশাপাশি নিয়মিত ভিত্তিতে সেটির প্রয়োগ করতে হবে।
ভূমিকম্প সহনশীল নগরায়ণ বিষয়ে আয়োজিত দুই দিনের এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা কথাগুলো বলেন। তাঁরা মনে করেন, উন্নত মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করলে রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম হবে, তাতে আমদানি ব্যয়ও কমবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে গত শনিবার শুরু হওয়া এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রাজউক চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত এই সেমিনার গত রোববার শেষ হয়। ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তা প্রতিরোধে করণীয় বিষয় তুলে ধরতেই ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট: রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেমিনারটির আয়োজন করা হয়। প্রকল্প কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ হেলালী। দ্বিতীয় পর্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী।
সেমিনারে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিমিরো মেগুরো বলেন, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য বিল্ডিং কোড হালনাগাদ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের আগে যেসব ভবন তৈরি হয়েছিল, সেগুলোর সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনবলের দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল কোড কাউন্সিলের (আইসিসি) বিশেষজ্ঞ এস কে ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের বিল্ডিং কোড পুরোনো হওয়ায় বেশি শক্তিশালী রড থেকে শুরু করে অনেক উন্নত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশটি। এসব পণ্য টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তিন বছর অন্তর বিল্ডিং কোড প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় পেশাদারদের মাধ্যমে তৈরি করানোর ওপর জোর দেন তিনি।
আইসিসির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক জনসন বলেন, অনেক সময় বিল্ডিং কোডে উল্লেখ না থাকলে নতুন ও উদ্ভাবনী পণ্য ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে দেশ। এসব ক্ষেত্রে আইসিসি দ্রুত সার্টিফিকেশন ও অ্যাক্রেডিটেশনের ব্যবস্থা করে থাকে, যাতে এসব পণ্য ব্যবহার করে সুবিধা পাওয়া যায়।
সেমিনারের দ্বিতীয় দিনে একটি অধিবেশনে বিল্ডিং কোড হালনাগাদ না করা হলে কী রকম আর্থসামাজিক ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, বিল্ডিং কোড মেনে ইমারত নির্মাণে অনাগ্রহ দেখালে জনগণকে সচেতন করতে হবে। কারণ, বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ তুলনামূলক ব্যয়বহুল মনে হলেও কোড মেনে সঠিক পণ্যসামগ্রী ও নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি করলে তা যেমন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে বিল্ডিং কোড না মানলে সেটাকে স্থাপনা আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবন ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিতে পারে।
প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল হোসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক কোড ও চর্চা অনুসারে নকশা–বিশেষজ্ঞরা মাঝারি ও উঁচু স্থাপনার কাঠামোর জন্য উচ্চতর গ্রেডের রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের সুপারিশ করেন।
রাজউকের চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, সেমিনারে যেসব পরামর্শ ও সুপারিশ উঠে এসেছে, সেগুলো বিচার–বিশ্লেষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটির পরামর্শে উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।