বরাদ্দ কমছে শিক্ষায়, বাড়ছে রাস্তাঘাটে

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)

চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উঠছে আগামীকাল বুধবার। সভায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপির আকার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এডিপির সংশোধনের প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী, এবার সবচেয়ে বড় খড়্গ নামছে শিক্ষা খাতে। এরপর স্বাস্থ্য খাতে। অথচ এ দুই খাতই করোনার সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের সংশোধিত এডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের। এ খাতে বরাদ্দ কমছে ৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে এই বিভাগের ৬৯টি প্রকল্পে ১৩ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। সেই বরাদ্দ কমিয়ে এখন ৭ হাজার ২১৮ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে তিনটি নতুন প্রকল্প যোগ করা হয়েছে।

বরাদ্দ কমার দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে আছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এই বিভাগের বরাদ্দ ৫ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। মূল এডিপিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৪২টি প্রকল্পে ১৫ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে সেই বরাদ্দ কমিয়ে ৯ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বরাদ্দ কমলেও প্রকল্প বাড়ছে একটি।

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক এক সম্মেলনে আমাদের নেতারা শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। এখন সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানোয় সেই প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? আমি হোঁচট খেয়েছি। এটা অপ্রত্যাশিত, এটা আশাব্যঞ্জক নয়
রাশেদা কে চৌধূরী, উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার

বরাদ্দ কমানোয় তৃতীয় স্থানে আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশোধিত এডিপিতে এই মন্ত্রণালয়ের ৯ প্রকল্পে ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বরাদ্দ কমছে ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে এই মন্ত্রণালয়ের ৯ প্রকল্পে বরাদ্দ ১১ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ১৬ হাজার ৪১১ কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে। মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে শেষ পর্যন্ত মূল এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উন্নত দেশের কাতারে যেতে চাচ্ছি আমরা। তাই অবশ্যই শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ নানা সমস্যার মধ্যেও শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক এক সম্মেলনে আমাদের নেতারা শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। এখন সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানোয় সেই প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? আমি হোঁচট খেয়েছি। এটা অপ্রত্যাশিত, এটা আশাব্যঞ্জক নয়।’

রাশেদা কে চৌধূরীর মতে, কোভিডের সময় শিক্ষা খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাই শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়ানো দরকার। খরচ করতে না পারার অদক্ষতা আর কত দিন থাকবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিচ্ছে। এ ঋণের শর্ত হিসেবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আইএমএফ বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বললেও ঋণ অনুমোদনের এক মাসের মধ্যে এ দুই খাতের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বরাদ্দ বৃদ্ধিতে শীর্ষ তিন

সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বৃদ্ধির শীর্ষ তিনটি খাত হলো স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেই হিসাবে বরাদ্দ বাড়ানোর শীর্ষ দুটি খাতই হচ্ছে জনতুষ্টিমূলক। নির্বাচনের বছরে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে সব সময়ই প্রশ্ন থাকে।

সংশোধিত এডিপির প্রস্তাব অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে ৪ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। ২৩৮টি প্রকল্পে ৩৯ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য এটিই সর্বোচ্চ বরাদ্দ। মূল এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য বরাদ্দ আছে ৩৫ হাজার ৩০ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগ গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে থাকে।

বরাদ্দ বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় স্থানে আছে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাত। সংশোধিত এডিপিতে এই খাতে বরাদ্দ সাড়ে তিন গুণের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। এই খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। জরুরি প্রকল্প নেওয়ার জন্য এমন বরাদ্দ রাখে পরিকল্পনা বিভাগ।

তৃতীয় স্থানে থাকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ছে দ্বিগুণ। সংশোধিত এডিপিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়িয়ে ২ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা করা হচ্ছে।