সরকারি কর্মচারীদের জন্য সংশোধিত বাজেটে মহার্ঘ ভাতায় বরাদ্দ রাখার চিন্তা

সংশোধিত বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা খাতে বরাদ্দ রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আজ সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ ইঙ্গিত দেন।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট সম্পর্কে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাজেট-ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে উন্নয়ন বাজেট সমন্বয় করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের বহু ধরনের দাবিদাওয়া মেটাতে গিয়ে বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয় আছে। মহার্ঘ ভাতার বিষয় আছে। তাই রাজস্ব খাতে ব্যয় কমিয়ে রাখা খুবই কঠিন। কাজেই সবকিছু আমাদের (উন্নয়ন বাজেট) ওপর এসে পড়ে। উন্নয়ন বাজেট কমাতে হবে।’

পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, উন্নয়ন বাজেটে কমালে জিডিপিতে প্রভাব পড়বে, তা নয়। এক বছর বড় বিনিয়োগ থেমে থাকলেও উৎপাদন কমে যায় না। গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের জন্য বেশি বিনিয়োগ দরকার নেই। তিনি জানান, এবার মার্চ মাসে নয়; বরং জানুয়ারি মাসের শেষ দিকেই তাঁরা সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট করতে চান।

আজ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক সভা হয়, যাতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেকের চেয়ারপারসন মুহাম্মদ ইউনূস।

মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানো যাচ্ছে না। এটি কমাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকিসহ অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত আছে।

উপদেষ্টা জানান, এখন থেকে কোনো প্রকল্প গ্রহণের সময় পরিবেশবিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ, প্রায় সব প্রকল্পই পরিবেশের ওপর কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলে। সেচ প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আগের সরকারের আমলে গ্যাস খাত অবহেলিত ছিল।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে ডিও লেটার দিয়ে বলেছি বিভিন্ন এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রস্তাব পাঠাতে। কেননা এখন স্থানীয় পর্যায়ে সংসদ সদস্য নেই। আছেন শুধু আমলারা আর উপদেষ্টারা। তাই উপদেষ্টারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। রাস্তাঘাট কোথায় কী সংস্কার দরকার, সেসব সমাধান করা হবে।’

একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন

একনেকে আজ ১ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৩১ কোটি টাকা।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজীবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) নদীবন্দর নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত); আশুগঞ্জ-পলাশ সবুজ প্রকল্প; কুমিল্লা অঞ্চলে টেকসই কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ; অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবারগাছ কর্তন, পুনর্বাগান সৃজন ও রাবার প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়ন; ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্ল্যান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন; রশিদপুর-১১ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন; ২ডি সাইসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ অ্যান্ড ৯; মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন; বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (চতুর্থ সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক মৌলভীবাজার (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পটি বাতিলের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। ওই প্রকল্প বাতিলের জন্য বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।