ব্যাগেজ বিধিমালায় তিনটি বড় পরিবর্তন, বিদেশ থেকে যা যা আনা যাবে
বাজেটে অর্থমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে তিনটি বড় পরিবর্তন এনেছেন। অপব্যবহার রোধে নির্দিষ্ট করা হয়েছে স্বর্ণালংকারের সংজ্ঞা।
বিদেশফেরত একজন যাত্রী কী আনতে পারবেন, তা রয়েছে ব্যাগেজ বিধিমালায়। এবারের বাজেটের দিন জারি করা এই বিধিমালায় তিনটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তন তিনটি হলো স্বর্ণের অলংকারের সংজ্ঞা সংযোজন, মুঠোফোন আনার সুবিধা সুনির্দিষ্ট করা এবং স্বর্ণ ও সিগারেট আনার সুবিধা ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রীর ক্ষেত্রে বাতিল করা।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় ব্যাগেজ বিধিমালায় পরিবর্তনের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে কাস্টমস শুল্ক ফাঁকি দিতে স্বর্ণালংকারের মধ্যে অলংকারের মতো দেখতে অপরিশোধিত স্বর্ণ (২৪ ক্যারেট) আনার প্রবণতা বাড়ছে। সে জন্য ব্যাগেজ বিধিমালায় স্বর্ণালংকারের সংজ্ঞা সংযোজন করা হয়েছে।
বিদেশফেরত একজন যাত্রী বিনা শুল্কে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণালংকার আনতে পারেন। এক যুগ ধরে ব্যাগেজ বিধিমালায় এই সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। এবারও এই সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। তবে এই সুবিধার অপব্যবহার ঠেকাতে স্বর্ণালংকারের সংজ্ঞা সংযোজন করে বলা হয়েছে, ‘স্বর্ণালংকার অর্থ ২২ বা তার চেয়ে কম ক্যারেটের স্বর্ণে নির্মিত নকশাখচিত ও পরিধানযোগ্য অলংকার।’ অর্থাৎ ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণবার গলিয়ে চুড়ির মতো বানিয়ে আনার সুযোগ নেই এখন।
ঢাকা কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, স্বর্ণালংকারের নামে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বিমানবন্দর দিয়ে ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবারের চুড়ি নিয়ে আসার হার সম্প্রতি বেড়ে গেছে। প্রতি তোলা স্বর্ণবারের শুল্ক-কর ৪ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ১০০ গ্রাম বা প্রায় সাড়ে ৮ তোলা স্বর্ণবার দিয়ে বানানো মোটা চুড়ির শুল্ক-কর ৩৪ হাজার ২৯৩ টাকা। এই শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকলেও কিছুই করার ছিল না কাস্টমস কর্মকর্তাদের; কারণ, স্বর্ণালংকারের সংজ্ঞা ছিল না। এখন এই সুবিধার অপব৵বহার হবে না।
বিধিমালায় দ্বিতীয় বড় পরিবর্তন এসেছে মুঠোফোন আনার সুবিধায়। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, বিদেশ থেকে ফেরার সময় একজন যাত্রী দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন বিনা শুল্কে আনতে পারবেন। এর বাইরে আরেকটি নতুন মুঠোফোন আনা যাবে। তবে এ জন্য শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে একজন যাত্রী বিদেশ থেকে তিনটি মুঠোফোন আনতে পারবেন।
আগে বিদেশফেরত একজন যাত্রী দুটি মুঠোফোন বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এই দুটি মুঠোফোন নতুন নাকি ব্যবহৃত হবে, তা উল্লেখ ছিল না। এখন বিনা শুল্কে শুধু ব্যবহৃত মুঠোফোন আনার বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে নতুন মুঠোফোন আনা হলে কত শুল্ক-কর হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মুঠোফোনের দাম অনুযায়ী ৫, ১০ ও ২৫ হাজার টাকা শুল্ক-কর নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যাগেজ রুলের তৃতীয় পরিবর্তন হলো, ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রীদের জন্য স্বর্ণবার ও স্বর্ণের অলংকার আনার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া। আগের বিধিমালায় এটি সুস্পষ্ট ছিল না।
যা যা আনা যাবে
১২ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী একজন যাত্রী ৬৫ কেজি ওজনের ব্যাগেজ শুল্ক-কর ছাড়া খালাস করতে পারবেন। তবে ১২ বছরের নিচের বয়সী যাত্রী ৪০ কেজি ব্যাগেজ বিনা শুল্কে খালাস করতে পারবে। নতুন নিয়মে শুল্ক-কর পরিশোধ করে ১২টি পণ্য এবং শুল্ক-কর ছাড়া ২৬ ধরনের পণ্য আনার সুযোগ রয়েছে। আবার বিদেশি পাসপোর্টধারী একজন যাত্রী এক লিটার মদ শুল্ক-কর ছাড়া আনতে পারলেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীর সেই সুযোগ নেই।
শুল্ক-কর পরিশোধ করে যে ১২টি পণ্য আনা যাবে তার মধ্যে রয়েছে ১১৭ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার। এ জন্য ৪০ হাজার টাকা শুল্ক-কর দিতে হবে। এ ছাড়া ২০ তোলা রৌপ্যবার, ৩০ ইঞ্চি ও তদূর্ধ্ব টেলিভিশন, একটি নতুন মুঠোফোন, হোম থিয়েটার, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, ডিশ অ্যানটেনা, ক্যামেরা, ঝাড়বাতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে এয়ার গান ও ডিশওয়াশার বা ওয়াশিং মেশিন বা ক্লথ ড্রায়ার আনা যাবে।
বিনা শুল্কে যে ২৬টি পণ্য আনা যাবে তার মধ্যে ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার ও ২০০ গ্রাম ওজনের রৌপ্যের অলংকার, দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন, ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত টেলিভিশন, ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ, কম্পিউটার স্ক্যানার, প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন, ভিডিও ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৯ ইঞ্চি পর্যন্ত এলসিডি মনিটর, ওভেন, রাইস কুকার, সেলাই মেশিন, সিলিং ফ্যান, এক কার্টন সিগারেট ইত্যাদি।