মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে: আইসিসিবি

গতকাল শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইসিসিবির ২৯তম বার্ষিক কাউন্সিল সভায় এক্সিকিউটিভ বোর্ড প্রতিবেদন পেশ করা হয়।সংগৃহীত

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে। যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাবে উচ্চ আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে যায়। সেই রেশ না কাটতেই এখন মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হওয়া উত্তেজনার কারণেও দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গতকাল শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইসিসিবির ২৯তম বার্ষিক কাউন্সিল সভায় এক্সিকিউটিভ বোর্ড প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ডলার-সংকট নিরসনের কোনো সংকেত এখনো দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে আমদানি সীমিত রাখার উদ্যোগ বহাল রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে পণ্য ও কাঁচামালের সরবরাহ সংকুচিত হচ্ছে।

আইসিসিবির কাউন্সিল সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ফারুক ডোমুন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঞ্চল—পূর্ব ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ চলছে। লোহিত সাগরে সাম্প্রতিক আক্রমণ ও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ইতিমধ্যে সুয়েজখালের মাধ্যমে জাহাজ চলাচল (শিপিং) বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে বৈশ্বিক কনটেইনার পরিবহন ব্যয় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের তীব্রতা বাড়লে এটি জ্বালানি বাজারকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিতে পারে।

আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনা মহামারির অবস্থা থেকে ভালোভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে। তবে গত তিন বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে তা আবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এটি অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য হারে কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে বলে মনে করেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। আবার চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

আইসিসিবির বার্ষিক কাউন্সিলে ২০২৩ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয় এবং ২০২৪ সালের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কাউন্সিলে আইসিসি বাংলাদেশের নতুন নির্বাহী পর্ষদের নামও ঘোষণা করা হয়। এই পর্ষদের মেয়াদকাল হবে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত।