এনবিআরের নীতি কাজ না করায় কর-জিডিপি অনুপাত কমছে: সালমান এফ রহমান
বিশ্ববাজারে ডলার আরও শক্তিশালী হওয়ার কারণে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে, যদিও টাকার মান দীর্ঘদিন স্থিতিশীল ছিল। সেই বাস্তবতা এখন আর নেই। সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল টাকার বিনিময় হার ও সুদহার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
সালমান এফ রহমান আরও বলেন, দেশের করব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত বিশ্বে সবচেয়ে নিচের সারিতে; দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও যা সবচেয়ে কম। গত বছরের তুলনায় এ বছরে তা আরও কমেছে। এই প্রবণতা উল্টে দিতে হবে; তা না হলে অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
আজ রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ২৯তম ইউএস ট্রেড শোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি হলো, যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপর করের চাপ আরও বৃদ্ধি করা। কিন্তু যাঁরা করজালের বাইরে, তাঁরা স্বাধীন। এটা উল্টে দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানোর এটাই একমাত্র পথ। এনবিআরের নীতি যে কাজে আসেনি, কর-জিডিপির অনুপাত কমে যাওয়া তার লক্ষণ। তিনি আশা করেন, এবারের বাজেটে এ বিষয়ে বাস্তব কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই কাজে ডিজিটাইজেশন গতি আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এফডিআই বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের একক বৃহত্তম উৎস। এ দেশে চার বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার মার্কিন বিনিয়োগ আছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রপ্তানির একক বৃহত্তম গন্তব্য। বাংলাদেশে যত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, তার অর্ধেক উৎপাদনের পেছনে মার্কিন বিনিয়োগ আছে। বিদ্যুতের বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত টারবাইন দিয়ে উৎপাদিত হয়।
পিটার হাস বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, সেটাই দেশটির জাতীয় বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র; কিন্তু চ্যালেঞ্জ আছে। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক করেন না যে তাঁরা বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবেন। বরং তাঁরা ভাবেন, কোথায় সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে ব্যবসা করে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। তাঁরা সব সময় অনেক বিষয় খতিয়ে দেখেন, কোথায় ব্যবসা করা যায়। ফলে অন্য অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এখানে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় ভালো করতে হলে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমান বলেন, ২০০৯ সালের পর শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতি নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশও বদলে গেছে। সে জন্য বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে পিটার হাস যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে তিনি একমত।
ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ বলে জানান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, এটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সবকিছু ডিজিটাইজ করা; অর্থাৎ অনলাইনে সেবা দেওয়া। বাংলাদেশ এ নিয়ে কাজ করছে। বেশ কিছু সেবা ডিজিটাইজ করা হয়েছে, যদিও তা পূর্ণাঙ্গ হয়নি। কাগজে-কলমেও অনেক কিছু করতে হচ্ছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রণিধানযোগ্য উন্নতি করেছে বলে মন্তব্য করেন সালমান এফ রহমান, যেমন ভূমি নিবন্ধন। তিনি বলেন, ‘কোভিডের সময় এই ডিজিটাল সেবার কল্যাণে সরকারি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়েছে; এবং তখনো আমরা ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অর্থনীতিতে অনুভূত হয়েছে বলে জানান সালমান এফ রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দেশে প্রতিভাবান তরুণ কর্মী আছেন। তিনি আরও বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে মূল শক্তিগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাজারের সম্প্রসারণশীলতা ও সর্বোপরি ব্যবসাবান্ধব নীতি। এ ছাড়া নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ইউএস ট্রেড শো আজ ৯ মে থেকে শুরু হয়ে ১১ মে পর্যন্ত চলবে। মেলায় মেটলাইফ, মাস্টারকার্ড, এক্সন মবিল, শেভরন করপোরেশন, ফোলিয়া ওয়াটারের মতো প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।