ঢাকা শহরে আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে দিনমজুরের কাজ করছি। কয়েক বছর আগেও যে আয় হতো, তাতে মোটামুটি সংসার খরচ চলে যেত। মাঝেমধ্যে টাকা জমানোর সুযোগও পেতাম। কিন্তু গত দুই-তিন বছরে অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে। একদিকে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে, অন্যদিকে কাজের সুযোগ কমেছে। এর ফলে এখন আয়ের চেয়ে খরচ বেশি।
আমি ও আমার স্ত্রী দুজনেই দিনমজুরের কাজ করি। তাতে মাসে সব মিলিয়ে ২৬-২৮ হাজার টাকার মতো আয় হয়। থাকি শেরেবাংলা নগরের এক বস্তিতে। ঘরভাড়া, রান্নার লাকড়ি, ওষুধ ও খাবার খরচেই মাসে ২৩ হাজার টাকা চলে যায়। ঋণের কিস্তি দিতে হয় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এতে মাস শেষে হাতে কোনো টাকা থাকে না।
অর্থাভাবে বাজার থেকে মাছ–মাংস কিনে খাওয়ার খুব বেশি সুযোগ হয় না। আমাদের মতো মানুষের আয় বাড়ানো বা খরচ কমানোর কোনো উপায় আমাদের হাতে নেই। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন গ্রাম হিসাবে চাল-ডাল-তেল-চিনি কিনি। এ অবস্থায় বাজেটে আমাদের মতো দিনমজুরের প্রধান চাওয়া, জিনিসপত্রের দাম যেন কমে আসে। বিশেষ করে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, আলু, ডিম ও মুরগির দাম বাড়লে আমাদের কষ্টও বেড়ে যায়।
বর্তমানে দিনমজুরির বাজার খুব খারাপ যাচ্ছে। আগে মাসে ১৫-২০ দিনই কাজ থাকত, এখন ১০-১৫ দিন কাজ পেতেও কষ্ট হয়। যেমন গত চার দিনে কোনো কাজ পাইনি। আমার বয়স ৬৩ বছরের বেশি। বয়স্ক দেখেও অনেকে কাজে নিতে চান না। এর ফলে দিন দিন জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ঢাকায় স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় টিসিবির পরিবার কার্ড পাইনি। আর দিনমজুরি করি বলে ওএমএসের চাল-আটা কেনার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর সময় পাই না। অনেক সময় টাকাও থাকে না। এ অবস্থায় আমাদের মতো শ্রমিকদের জন্য আলাদা কার্ড করার দাবি জানাই। বিশেষ করে বয়স্ক যাঁরা, তাঁদের জন্য ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।
হঠাৎ অসুস্থ হলে আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। সরকারি হাসপাতালে লম্বা সময় দাঁড়িয়েও ডাক্তারের সিরিয়াল পাই না। আবার যে ওষুধ লিখে দেন, তা অনেক সময় হাসপাতালে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে ওষুধ কেনার টাকা থাকে না। তাই আমাদের মতো মানুষের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা দরকার বাজেটের মাধ্যমে।
মো. সিদ্দিক
দিনমজুর, শেরেবাংলা নগর এলাকা, ঢাকা