নতুন বাজেটে ব্যবসায়ীদের যেখানে করবোঝা বাড়ল

দেশের নতুন বাজেটে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন ভালো খবর আছে, তেমনি খারাপ খবরও আছে। যেমন রেয়াতি করসুবিধা নিতে গেলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে নানা ধরনের শর্ত পালন করতে হবে। আবার বাড়তি করের বোঝাও বহন করতে হবে।

নতুন বাজেটের অর্থবিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নানা ধরনের ব্যবসায় করের চাপ বেড়েছে। ২০২৪ সালের অর্থবিল নিয়ে বেসরকারি পরামর্শক সংস্থা এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের বিশ্লেষণেও এমন কথা বলা হয়েছে।

এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস জানায়, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য করপোরেট কর কমানোর সুবিধা নেওয়া কঠিন হবে। কারণ, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির জন্য এই করহার ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। শর্ত হলো, একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকা ও বার্ষিক মোট ৩৬ লাখ টাকার বেশি খরচ হলে তার সবটা বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে হতে হবে। বর্তমানে এই শ্রেণির প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২৭ শতাংশ কর দিতে হয়। ছোট কোম্পানির সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে করা কঠিন।

বিশেষ করে পুরোনো ঢাকা বা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো জায়গায় অনেক ব্যবসায়ী নগদ লেনদেনে ব্যবসা করে থাকেন। এমনকি রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মতো ব্যবসাকেন্দ্রগুলোতেও অনেকে নগদে লেনদেন করে থাকেন।

জুস উৎপাদকদের করভার বাড়বে ৫০০%

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মিষ্টিজাতীয় কোমলপানীয় উৎপাদকদের ওপর করভার ৫০০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের উৎসে কর দশমিক ৬ শতাংশের পরিবর্তে টার্নওভার কর ৩ শতাংশ করা হয়েছে। বিষয়টি আরেকটু সহজ করে বলা যাক, একটি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় আড়াই কোটি টাকা, আর মুনাফা ৫০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে আগে ন্যূনতম কর বসত লেনদেনের দশমিক ৬ শতাংশ। এতে আড়াই কোটি টাকার আয়ের ওপর কর আসত দেড় লাখ টাকা। এখন কর বসবে ৩ শতাংশ হারে। এতে করের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে সাত লাখ টাকা। এর মানে, মিষ্টিজাতীয় কোমলপানীয় উৎপাদকদের ওপর করভার বেড়েছে ৫০০ শতাংশ।

• জুস উৎপাদকদের করভার বাড়বে ৫০০%।
• ছোট ঠিকাদারদের হাতে কম টাকা আসবে।
• ১০ দিনে শুল্ক-কর না দিলে সুদ বসবে।
• মোবাইল ফোন কোম্পানির লাইসেন্স নবায়নে বাড়তি কর।

মোবাইল ফোন কোম্পানির লাইসেন্স নবায়নে বাড়তি কর

মোবাইল ফোন অপারেটরদের নানা কারণে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে বিভিন্ন ধরনের মাশুল দিতে হয়। যেমন রাজস্ব শেয়ারিং, লাইসেন্স নেওয়া ও নবায়ন। এসব সেবার জন্য মাশুল দিতে হয়। আগে এই মাশুলের ওপর উৎসে কর হিসেবে ১০ শতাংশ কর কেটে রাখত এনবিআর। নতুন বাজেটে এই করহার ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের ওপর করের চাপ বাড়বে।

ছোট ঠিকাদারদের হাতে কম টাকা আসবে

ছোট ঠিকাদারদের ওপর করের চাপ বেড়েছে। ৫০ লাখ টাকার কম বিল পরিশোধ হলে ওই অর্থের ওপর এত দিন ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৩ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হতো। এখন থেকে এই হার হবে ৫ শতাংশ। ফলে ৫০ লাখ টাকার কোনো বিল পরিশোধ করলে ছোট ঠিকাদারের হাতে এক লাখ টাকা কম আসবে। তবে বড় ঠিকাদারদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২ কোটি টাকার বেশি বিল পরিশোধ হলে ৭ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ কর কাটা হবে।

ওষুধ কোম্পানির খরচ বাড়বে

ওষুধ কোম্পানির গবেষণাগারে বিশেষ ধরনের আসবাব ও র‍্যাক ব্যবহার করা হয়, যার অধিকাংশই আমদানি করা হয়। এসব পণ্যে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে ওষুধশিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে।

খরচ বাড়বে দেশি উৎপাদকদের

সম্পূরক শুল্ক ও স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। যেমন ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, এসি (শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র), আইসক্রিম ও কোমলপানীয়ের উৎপাদন পর্যায়ে করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে আইসক্রিমে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে প্রতি ১০০ টাকার আইসক্রিমের দাম কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তে পারে। একই হারে দাম বাড়তে পারে কোমলপানীয়ের। সেখানেও সম্পূরক শুল্ক ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটরের সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন করা (মূসক বা ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে এসি সরবরাহের পর্যায়ে নতুন করে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বসানো হয়েছে। এসব শুল্ক-কর বসানোর ফলে উৎপাদন পর্যায়ে খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়ে গিয়ে পড়বে।

১০ দিনে শুল্ক-কর না দিলে সুদ বসবে

আমদানি পর্যায়ে সরকারের পাওনা শুল্ক-কর ১০ দিনের মধ্যে পরিশোধ না করলে সুদ আরোপ হবে। এই সুদের হার হবে ১০ শতাংশ। ফলে মালামাল আমদানি করে সঙ্গে সঙ্গে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। এতে ব্যবসায় চাপ বাড়বে। ব্যবসায় নগদ অর্থের প্রবাহ কমবে। কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার জন্য এনবিআর এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মনে করা হয়।